Breaking News

প্রতিদ্বন্দ্বীকে নয়, গ্রাহককে ভয় পাও

জেফ বেজোস
জেফ বেজোস
ছবি: রয়টার্স

ছেলেবেলা থেকেই আমি সব সময় উদ্যোক্তা হতে চেয়েছি। আমি সেই সব মানুষের একজন, যারা সব সময় ভাবে আরও একটু ভালো করার সুযোগ আছে। এমনকি রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেও আমি ভাবতাম, কীভাবে এই রেস্তোরাঁটা আরও ভালো করতে পারে। আইডিয়া বা ভাবনা আমার মাথায় সব সময় ছিল। আমি মনে করি, সব মানুষের মধ্যেই আরও একটু ভালো করার একটা সহজাত তাড়না আছে। অতএব উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকেরা যদি তাঁদের কৌতূহল মেটাতে চেষ্টা করেন, আগ্রহের পেছনে ছোটেন, একটা পথ খুঁজে বের করেন, তাহলে তাঁরা সফল হবেন। কিন্তু বলে রাখি, কখনোই পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবেন না। এ অসন্তোষ, এই আরও ভালো করার আকাঙ্ক্ষাকেই কাজে লাগাতে হবে। আমার মতে; আপনার প্রতিযোগীর থেকে এগিয়ে থাকার জন্য নয়, বরং গ্রাহককে আরও সন্তুষ্ট করার জন্য এ অসন্তোষকে কাজে লাগানো উচিত। এ ভুলটা অনেক নতুন প্রতিষ্ঠানও করে। শুরুতেই তারা প্রতিযোগীর দিকে যতটা নজর দেয়, গ্রাহকের দিকে ততটা দেয় না। কোনো শিল্প যদি পরিণত হয়, কখনো কখনো অনুসরণ করাও জয়ের কৌশল হতে পারে। নতুন প্রতিষ্ঠান অনেক সময় নতুন কিছু চেষ্টা করে, যেটা বিফলে যায়। কিন্তু এর জন্য বড় অঙ্কের মাশুল দিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

আমাজন যেভাবে সফল হলো

শুরু থেকেই আমাজনকে বহুদূর নেওয়ার পরিকল্পনা আমার ছিল। আমি জানতাম, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ বইয়ের ব্যবসা সফল হবে। কিন্তু যে পরিমাণ বই বিক্রি হয়েছিল, তাতে আমি নিজেই চমকে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রস্তুতি তেমন ভালো ছিল না। তখন প্রতিষ্ঠানে সর্বসাকল্যে ১০ জন কর্মী ছিল। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। সুতরাং প্রকৌশলীদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি বই প্যাকেট করা শুরু করেছিলাম। এমনকি বই রেখে প্যাকেট করার মতো টেবিলও আমাদের ছিল না। হাঁটুতে ভর করে, মাটিতে বসে বই প্যাকেট করতে হচ্ছিল। কাজ করতে করতে রাত একটা-দুইটার দিকে আমি আমার এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী সহকর্মীকে বললাম, ‘পল, হাঁটুটা মনে হয় গেছে। হাঁটু রক্ষা করার জন্য নি প্যাড দরকার।’ পল বলল, ‘জেফ, আমাদের দরকার টেবিল।’ আমি বললাম, ‘ওহ! তাই তো!’ পরদিন টেবিল এল। আমাদের কাজের গতি দ্বিগুণ হলো। সেই সঙ্গে কোমর আর হাঁটুটাও রক্ষা পেল।

এসেছে অনেক বাধা

আমাজনের চলার পথে অনেক অনেক বাধা এসেছে। দুর্ভাগ্য বলব না। কিন্তু অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। মনে আছে, তখন আমাদের মাত্র ১২৫ জন কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বইয়ের দোকান বারনস অ্যান্ড নোবেল অনলাইনে বই বিক্রি করা শুরু করল। আমাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল স্রেফ দুই বছরের। আমরা শুরু করেছি ১৯৯৫ সালে, ওরা ১৯৯৭ সালে। সংবাদপত্রে শিরোনাম হতে শুরু করল। সবাই লিখল, আমাদের পথে নামতে খুব বেশি দেরি নেই। ১২৫ জন কর্মী নিয়ে বছরে আমাদের ছয় কোটি ডলারের বই বিক্রি হতো। অন্যদিকে বারনস অ্যান্ড নোবেলের কর্মী ছিল ৩০ হাজার। বছরে ৩০০ কোটি টাকার বই বিক্রি করত ওরা। যেই শিরোনামটা আমার এখনো মনে আছে, সেটা হলো ‘আমাজন। ছ্যাঁকা খেয়েছে।’

তখন সবাইকে নিয়ে এক সভায় বসলাম। ১২৫ জন মানুষকে নিয়ে এক ঘরে বসা খুব কঠিন ছিল না। আমরা সবাই ভীত ছিলাম কারণ কোনো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হওয়া সেটাই প্রথম। অবস্থা এমন, মা-বাবারা আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘ঠিক আছ তো?’ তো সভায় সবাইকে ডেকে আমি বললাম, ‘দেখো, ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভয় পেয়ো না। কারণ, তারা কখনোই আমাদের টাকা দেয় না। আমাদের টাকা দেয় গ্রাহক, অতএব গ্রাহককে নিয়ে ভয় পাও। আমরা যদি প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে মনোযোগ না দিয়ে গ্রাহককে মনোযোগ দিই, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ আমি সত্যিই এ কথা বিশ্বাস করতাম। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আপনার ভাবা উচিত—কীভাবে আমার গ্রাহকের সংখ্যা দ্বিগুণ করা যায়। অতএব গ্রাহককে সন্তুষ্ট করুন, খুশি করুন।

(ইংরেজি থেকে অনূদিত)

 

No comments