‘পুঁচকে’ মালদ্বীপকে নিয়ে ভারত ও চীনের কেন এই টানাটানি
মালদ্বীপ হচ্ছে দ্বীপের মালা। ভারত মহাসাগরে নীল জলরাশির ১ হাজার ২০০টির মতো ছোট–বড় দ্বীপ নিয়ে এই দেশটি। অপরূপ সৌন্দর্যের সমুদ্রসৈকত আর বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্য দেশটি সুপরিচিত। ছোট দ্বীপগুলো বিশ্বের ধনী ও খ্যাতনামা ব্যক্তিদের অবকাশযাপনের ঠিকানা।
একজন নিসর্গপ্রেমীর আয়নায় চার লাখ মানুষের দেশটির আকর্ষণীয় ছবি ফুটে উঠবে সন্দেহ নেই, কিন্তু পর্যবেক্ষকের অনুসন্ধানী চোখে এর চেহারা কিছুটা অন্য রকম।
‘সিন্ধুর টিপ সিংহল দ্বীপ’ শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং ভারত মহাসাগরের একেবারে কেন্দ্রে থাকা এই মালদ্বীপে দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা দিন দিন কদর্য চেহারা নিচ্ছে। এই হস্তক্ষেপের অভিঘাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এক যুগের বেশি সময় ধরে টালমাটাল। মালদ্বীপে বেশির সময়ই ক্ষমতায় ছিল ভারতপন্থী সরকার। চীনপন্থী সরকার ছিল মাত্র দুবার।
মালদ্বীপকে যদি আমরা একজন ব্যক্তির চেহারায় কল্পনা করি, তাহলে দেখা যাবে, মোটা রশি দিয়ে ব্যক্তিটির শরীর বাঁধা, আর রশির এক প্রান্ত ভারতের হাতে, আরেক প্রান্ত চীনের হাতে। প্রয়োজনমতো একবার ভারত রশি ধরে টান মেরে মালদ্বীপ নামের ব্যক্তিটিকে নিজের কক্ষে নিচ্ছে, আরেকবার একই কাজ করছে চীন। কোনো দেশই রশি দুটি ছেড়ে দিয়ে মালদ্বীপ নামের ব্যক্তিটিকে স্বাধীনভাবে চলতে দিচ্ছে না।
‘একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর’। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত মহাসাগরে চীনকে রুখতে তার ‘অ্যামবিশন’ পূরণে দরকার মালদ্বীপকে। এরই মধ্যে মালদ্বীপের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
‘পুঁচকে’ মালদ্বীপকে কেন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার ‘জায়ান্ট’ দুই রাষ্ট্র এত গুরুত্ব দিচ্ছে, এর পরিণতি কী হবে, মালদ্বীপ তার সার্বভৌমত্ব বাঁচিয়ে রেখে চলতে পারবে কি না—এ লেখায় থাকবে সেই বিশ্লেষণ।
ভারতের ‘মালদ্বীপ প্রথম’ নীতি
ভারতের লাক্ষ্মা দ্বীপ থেকে মালদ্বীপের দূরত্ব মাত্র ৭০ নটিক্যাল মাইল। আর ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে দূরত্ব ৩০০ নটিক্যাল মাইলের মতো। মালদ্বীপ শুরু থেকেই ভারতের প্রভাব বলয়ের অধীনে থাকা একটি দেশ। দেশ দুটির সম্পর্ককে এক হিসেবে ঐতিহাসিক বলা যায়।
১৯৬৫ সালে মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর ভারত কেবল মালদ্বীপকে প্রথম স্বীকৃতিদাতা দেশই নয়, ভারত প্রথম দেশ, যারা রাজধানী মালেতে আবাসিক মিশন খুলেছিল। স্বাধীনতার প্রথম চার দশক মালদ্বীপের সঙ্গে বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক সম্পর্কের কেন্দ্রে ছিল কেবল ভারতই। ২০০৪ সালেও বিশ্বব্যাপী তাদের কূটনৈতিক মিশন ছিল চারটি—যার একটি নয়াদিল্লিতে।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হতে শুরু করে। এভাবে একদিন আসে ১৯৮৮ সাল। ক্ষমতায় তখন প্রতাপশালী মামুন আবদুল গাইয়ুম। ছোটখাটো মানুষটা দেশ চালাচ্ছেন শক্ত হাতে।
হঠাৎ এক রাতে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুমের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সাহায্য চেয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের টেলিফোন করলেন। কিন্তু কেউ সাড়া দিলেন না, একজন ছাড়া। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।
রাজীব গান্ধী নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলেন, সত্যিই টেলিফোনটি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট করেছেন কি না। সত্যি তাঁর সাহায্য প্রয়োজন কি না।
ওই সময় মালেতে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন অরুণ কুমার ব্যানার্জি। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অরুণ কুমার ব্যানার্জি তুলে ধরেছেন কঠিন সেই সময়ের কথা। তাঁর ভাষ্যে, ‘তামিল বিদ্রোহীদের একটা গোষ্ঠী বাইরে থেকে আক্রমণ করেছিল, রাষ্ট্রপতি গাইয়ুম তখন ভারতের কাছে জরুরি সাহায্য চাইলেন।
আক্রমণটা বাইরে থেকে, প্রেসিডেন্ট নিজে সাহায্যপ্রার্থী আর তাঁর নিজের তা ঠেকানোর ক্ষমতা নেই—এই তিনটি ফ্যাক্টর বিবেচনা করে ভারতও দ্রুত সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সকাল ছটা নাগাদ বোধ হয় দিল্লিতে প্রেসিডেন্টের ফোন এসেছিল, আর রাত নয়টার মধ্যেই মালদ্বীপে আমাদের সেনা পৌঁছে যায়। মাত্র ১৫ ঘণ্টার মধ্যে এত দ্রুত সেনা পাঠানো কিন্তু অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়— কিন্তু ভারত সেটা করে দেখিয়েছিল।’ গাইয়ুমকে রক্ষায় ভারতের ওই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন ক্যাকটাস।
তবে কূটনৈতিকভাবে ভারতের দিকে হেলে থেকেও গাইয়ুম যে কখনো দিক পরিবর্তন করেননি, তা নয়। চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।
গাইয়ুমের তিন দশকের স্বৈরশাসনের অবসানের পর মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। ক্ষমতায় আসেন যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা মোহাম্মদ নাশিদ নামে এক তরুণ, যিনি একসময় সাংবাদিকতা করতেন, মানবাধিকারকর্মীও ছিলেন। নাশিদ প্রকাশ্যে ভারতপন্থী ভূমিকা নিয়ে আলোচিত হন। এ সময় ভারত-মালদ্বীপ স্বাক্ষর করে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি। এর আওতায় ছিল মালদ্বীপের ২৬টি প্রধান দ্বীপে রাডার স্থাপন, যা দিয়ে ভারতের উপকূলীয় কমান্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়। এ ছাড়া ছিল ভারতীয় নৌবাহিনী ও মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এমএনডিএফ) যৌথ নজরদারি এবং টহল কার্যক্রম। ছিল ভারতের পক্ষ থেকে একটি ‘ধ্রুব’ হেলিকপ্টার সরবরাহ ও ২৫ শয্যার সামরিক হাসপাতাল নির্মাণ। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে মালদ্বীপ পুরোপুরি ভারতীয় নিরাপত্তা গ্রিডের অধীনে চলে যায় বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।
কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই ২০১২ সালে এক পুলিশ বিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত হন নাশিদ। পরে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর কারাদণ্ড হয়। এরপরে অল্প সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট হন মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান। ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতা আবদুল্লাহ ইয়ামিন।
ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক খারাপ হয়, যখন মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান ও আবদুল্লাহ ইয়ামিন ক্ষমতায় ছিলেন। এই দুই নেতাই ভারতবিরোধী এবং চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় ইয়ামিন ভারতবিরোধিতার তুফান ছোটান। যদিও ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ভারতবিরোধিতার সুর কিছুটা নরম হয় এবং তিনি ভারত সফরও করেন।
ভারতের জন্য বড় স্বস্তির কারণ ছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইয়ামিনের পরাজয় এবং মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর ক্ষমতায় আসা। ইব্রাহিম ক্ষমতায় এসেই প্রথমে ভারত সফর করেন এবং চীনের প্রতি আগের সরকারের কিছু অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে আসেন।
ভারত এ পর্যন্ত মালদ্বীপে যেসব বড় প্রকল্প নিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট, ভারতে মালদ্বীপের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, কার্গো ভ্যাসেল সেবা, মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এমএনডিএফ) সামর্থ্য বৃদ্ধি; প্রশিক্ষণ, গুলহিফালহু পোর্ট প্রজেক্ট এবং হুলহুমালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো অবকাঠামো প্রকল্প।
২০২০ সালে ভারত মালদ্বীপকে একটি ‘ডরনিয়ার’ নামে সমুদ্রে নজরদারি বিমান সরবরাহ করে। এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থানান্তর, সাগরে অবৈধভাবে মাছ শিকার নজরদারি ছাড়াও এর আরেকটি কাজ হচ্ছে আঞ্চলিক জলসীমায় চীনা নৌযানের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
নয়াদিল্লির দিক থেকে ভারত মহাসাগরের বিরাট গুরুত্ব। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত মহাসাগরের ‘নেতা’ হওয়ার জন্য নানা চেষ্টাচরিত্র করে যাচ্ছে ভারত। একসময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি ছিল ভারতের দিক থেকে ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং মালদ্বীপের দিক থেকে ‘ভারত প্রথম’ নীতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা বলা যেতে পারে, ভারত মহাসাগরে এখন ভারতের নীতি হলো, ‘মালদ্বীপ প্রথম’।
মালদ্বীপে চীনা প্রভাব
মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সূচনা ১৯৭২ সালে। তখন থেকেই চীন দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। পরবর্তী সব সরকারের সঙ্গেই তারা সদ্ভাব রেখে চলার চেষ্টা করে। ১৯৮৫ সাল থেকে চীনা কোম্পানিগুলো মালদ্বীপে নানা ধরনের বিনিয়োগ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যদিও মালেতে চীনা দূতাবাস স্থাপন করা হয়েছে মাত্র এক দশক আগে।
মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের মধুচন্দ্রিমার বছরটি আসে ২০১৩ সালে, যখন নাশিদকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন আবদুল্লাহ ইয়ামিন, যিনি সাবেক একনায়ক মামুন আবদুল গাইয়ুমের সৎভাই। ঘটনাক্রমে ওই একই বছর চীনের প্রেসিডেন্ট হন সি চিন পিং। চিন পিং ক্ষমতায় এসেই তাঁর অতি উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক ট্রান্সপোর্ট করিডর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) প্রকল্প গ্রহণ করেন। পরের বছর চিন পিং মালদ্বীপ সফরে যান এবং শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মালদ্বীপ বিআরআইতে যুক্ত হয়।
গত কয়েক বছরে চীন সরকার তাদের বিনিয়োগকারীদের অনবরত মালদ্বীপে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টার ফল হিসেবে এখন পর্যন্ত চীন মালদ্বীপে যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে সড়ক ও আবাসন প্রকল্প নির্মাণ, প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (৩৪০০ মিটার রানওয়েসহ), বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন, মালে ও হুলহুলের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ। এ ছাড়া মালদ্বীপের পর্যটন ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেছে চীন। প্রসঙ্গত, মালদ্বীপে বিদেশি পর্যটকদের বড় অংশই চীনারা।
ইয়ামিন সরকারের সময়ে মালদ্বীপ চীনের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পায়। সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের মতে, এই সংখ্যাটি ৩.১ বিলিয়ন ডলার। তবে সংখ্যাটি ১.১ বিলিয়ন থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বলে মনে করা হয়। যে দেশটির জিডিপি ৪ বিলিয়ন ডলার, সেই তুলনায় তাদের ঋণের এই সংখ্যাটিও অনেক বড়। এত বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় আছে মালদ্বীপ সরকার।
মালদ্বীপে চীনের কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সব সময় ধোঁয়াশা থাকে। ২০১৮ সালে একবার আলোচনা হয়েছিল চীন মালদ্বীপের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মাকুনুধোতে জয়েন্ট ওশান অবজারভেশন স্টেশন বানাবে। পরে অবশ্য পরিকল্পনা আর এগোয়নি। এমনকি চীন মালদ্বীপে নৌঘাঁটি বানাবে, এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারত হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারে, কারণ এখন পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ চীনের নেই।
মালদ্বীপ কি পারবে
একটা বিষয় পরিষ্কার যে চীন, ভারত কেউ আর মালদ্বীপকে তার ‘সৌন্দর্যের কারণে ভালোবেসে’ গুরুত্ব দিচ্ছে না। যার যার স্বার্থরক্ষার প্রশ্নটিই এখানে বড়। মালদ্বীপ অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভারতকে উপেক্ষা করতে পারবে না, সম্পর্কের বহুমুখিনতা আর ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে।
চীন, ভারতের পাশাপাশি এখানে আরেকটি দেশ চলে আসে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। ভারত মহাসাগরে মালদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ডিয়েগো গার্সিয়া (যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন এই দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে) থেকে এর নৈকট্যের কারণে ক্ষুদ্র এই দেশটিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক কিছু। মালদ্বীপের কৌশলগত গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটা ছিল ভারতের বাইরে কোনো দেশের সঙ্গে মালদ্বীপের প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র খাতিরের কারণে নয়াদিল্লি এই চুক্তিকে স্বাগত জানায়।
আগামী বছর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর মধ্যেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের নেতৃত্বে ভারতবিরোধী প্রচারণার দমকা হাওয়া ভেসে বেড়াচ্ছে দেশটির গলি থেকে রাজপথে। এই দমকা হাওয়া দেশটির রাজনীতিতে বজ্রবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইয়ামিন এমন প্রচারও করছেন, মালদ্বীপে ভারতের সেনা উপস্থিতি রয়েছে এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে। যদিও এই তথ্যের সারবত্তা কম।
নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট অব চায়নিজ স্টাডিজের গবেষণা সহকারী রঙ্গলি মিত্র দ্য ডিপ্লোম্যাট সাময়িকীতে এক নিবন্ধে লিখেছেন, মালদ্বীপের রাজনীতিই ঠিক করে দেবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি কী হবে। আর আগামী বছরের নির্বাচনে ইয়ামিন বা ইব্রাহিম, যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন, ভারতের বিশেষ অসুবিধা হবে না। কারণ, তাঁর ভাষায়, ভারত আর মালদ্বীপের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ বছরের পরীক্ষিত সম্পর্ক, চীন যা কিনে নিতে পারবে না। ক্ষমতার পটভূমিতে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, ভারতের উচিত মালদ্বীপের প্রতি ইতিবাচক অবস্থান নেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় দেশটির পাশে থাকা।
এই বিশ্লেষক মালদ্বীপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভারতের আগ্রহ নিয়ে কিছু বলেননি। ইতিপূর্বে গাইয়ুমের মতো একনায়ককেও ভারত সমর্থন দিয়েছে।
আগামী নির্বাচনে প্রগ্রেসিভ পার্টি থেকে ইয়ামিন প্রার্থী হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে ইব্রাহিম লড়বেন, নাকি নাশিদ লড়বেন, যিনি এখন পার্লামেন্টের স্পিকার, তা পরিষ্কার নয়। নাশিদ ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। ইব্রাহিম ও নাশিদের মধ্যে যেকোনো বিরোধ ইয়ামিনের সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে। আর ইয়ামিনের মধ্যেই মালদ্বীপের সমৃদ্ধি দেখতে পায় চীন!
তবে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোতে কে বা কারা ক্ষমতায় এল-গেল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিগুলোর তাতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। তারা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে সচেষ্ট থাকে। আর এতে ছোট দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব এমনকি অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে।
No comments