খাবারের মানে নজর নেই, মাছ-মাংস থাকে নামেই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহমেদ সুমন। পাঁচ বছর ধরে তিনি হলে থাকছেন। কখনো হলের ক্যানটিনে খাবার খান, আবার কখনো হলের ডাইনিংয়ে। এসব খাবার খেয়ে তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়েছেন। সুমন প্রথম আলোকে বলেন, বাধ্য হয়ে এসব নিম্ন মানের খাবার মুখে তুলতে হয়। একে তো মোটা চাল, মাংসের নামমাত্র ছোট টুকরা ও পাতলা ডাল, তার ওপর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেউই আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। মূলত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও একই ধাঁচের খাবারের কারণে শিক্ষার্থীদের এ অসন্তোষ। অর্থাৎ ডাইনিংগুলোর রান্নায় প্রায় প্রতিদিনই একই উপকরণ থাকে। মাছ ও মুরগির ছোট ছোট টুকরা, ডাল, ডিম—এসবই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে। এক দশক আগেও এসব খাবার পরিবেশন করা হতো। এক দশক পরও কোনো বৈচিত্র্য আসেনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাবারের দিকে কর্তৃপক্ষের নজরও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল চালু রয়েছে সাতটি। আর ছাত্রীদের চারটি। মোট ১১টি হলে শিক্ষার্থী থাকেন প্রায় ৯ হাজার। ডাইনিং ও ক্যানটিন—দুই পদ্ধতিতে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার পরিবেশন করা হয়। দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই হলের খাবারের ওপর নির্ভরশীল। বাকিরা আশপাশের হোটেল থেকে ও নিজেরা রান্না করে খান। মূলত ছাত্রীরাই রান্না করেন। ডাইনিংয়ে খাবারের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর ক্যানটিনে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। করোনার আগে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। একই অবস্থা ক্যানটিনেও। তবে ক্যানটিনে খাবারের মান ডাইনিং থেকে সামান্য ভালো বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
খাবারের মানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৫ থেকে ৩০ টাকায় আর কী ভালো খাবার দেওয়া যাবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কর্মচারীদের বেতন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়। এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তবে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমান
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি হলের ডাইনিং ও ক্যানটিন ঘুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ চোখে পড়ে। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে আবর্জনা। হাঁড়ি-পাতিলে লেগে থাকছে ময়লা। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজেশ্বর দাশ গুপ্ত আক্ষেপের সুরে বলেন, ক্যানটিন ও ডাইনিংগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীন খাবার পরিবেশন করা হয়। এই খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ নানা রোগে ভোগেন। এ পরিস্থিতিতে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ডাইনিং ও ক্যানটিন পরিচালনা করে হল কর্তৃপক্ষ। ডাইনিংয়ে নিযুক্ত কর্মচারী ও বাবুর্চিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্কেলে বেতন পান। সাধারণত কর্মচারীদের মধ্যে থেকেই একজনকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ডাইনিং পরিচালনা করা হয়।
ডাইনিং ও ক্যানটিনের ম্যানেজারদের দাবি, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। তাই মাছ ও মাংসের বেশি টুকরা করতে হয়, মোটা চাল আনতে হয়।
স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, ভর্তুকি দেয় না কর্তৃপক্ষ
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো ভর্তুকি দেয় না। তবে ক্যানটিন ও ডাইনিংয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কর্মচারীদের বেতন কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে। সরাসরি খাবারে কোনো টাকা খরচ করে না। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে হল প্রাধ্যক্ষদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও নেই। অবশ্য মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি দিয়ে তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ক্যানটিন ও ডাইনিংয়ের ম্যানেজাররা বলছেন, ভর্তুকি না দেওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খাবারের মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
তবে এসব খাবার শিক্ষার্থীদের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করছে না বলে স্বীকার করেন সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মাইনুল হাসান চৌধুরী ও শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ অহিদুল আলম। তাঁরা বলেন, হলের খাবার নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। কিন্তু দামের জন্য কিছু করা যাচ্ছে না।
খাবারের মান বাড়ানোর দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, সবকিছুর দামও বেড়ে গেছে। কিন্তু একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে।
No comments