Breaking News

সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা

সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকাশিত তথ্য দেখে আবারও বোঝা যায় যে আমাদের সড়কগুলো কতটা অনিরাপদ। ওই তথ্যের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের নিবন্ধিত যানবাহনগুলোর মধ্যে ফিটনেস সনদ নিতে পারেনি এমন যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার। অথচ গত মাস পর্যন্ত তাদের কাগজপত্র নবায়ন করা হয়নি। অন্তত ১০ লাখ নিবন্ধিত যানবাহনের চালকের লাইসেন্স নেই। এসব তথ্য আমাদের খুবই উদ্বিগ্ন করে।

এ অবস্থায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে পত্রিকায় কলাম লেখা হয় আমাদের খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, নয়তো অযথাই এসব লেখা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। অথচ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না, সড়কগুলোকে নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম কাজটুকুও করছে না।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৪৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ হাজার ৮৮ জন নিহত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং তার আগের ১ বছরে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা অবশ্য আরও বেশি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালে বিআরটিএ অফিসগুলো বন্ধ ছিল। সে সময় যানবাহন নিবন্ধন কম হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এটিও ঠিক যে বিআরটিএ এবং গাড়ির চালক উভয়ই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিআরটিএ গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে ৩৭ লাখ ৬০ হাজারের কিছু বেশি। দেখা যাচ্ছে যে অন্তত ১০ লাখ যানবাহনের চালক লাইসেন্সবিহীন। এটিও সত্য যে অনেক চালক হালকা ও ভারী যানের জন্য আলাদা লাইসেন্স নিয়ে থাকে। বিআরটিএ গত ২ বছরে বেশ কয়েকবার লাইসেন্স সরবরাহের সময় বাড়িয়েছে। এতে অনেকে ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে শুরু করেছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আনফিট যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বিষয়টি পুলিশের দায়িত্ব বলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কথা জেনে সত্যিই সংস্থাটি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করছে কি না, তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো যদি তাদের দায়িত্ব এড়ায়, তবে দেশে নিরাপদ সড়কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে হয়। আমরা আবারো সরকারকে এবং নিরাপদ সড়কের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের একসঙ্গে কাজ করার আবেদন করছি। যখন সড়কে প্রতিদিনই অকালমৃত্যু ঘটছে, আমাদের অনুরোধ এ অবস্থায় একে অপরকে দোষারোপ না করে আসুন এই সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে কাজ করি।

 

No comments