টেন্ডুলকার-ওয়াহদের হটিয়ে তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ

কিয়ন হার্ডিংয়ের বাঁ পা–কে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায়!
এই ডানহাতি পেসারের আজই অভিষেক হলো। অভিষেকে নিজের গতি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে লাইন–লেংথের দিশা খুঁজে পাননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অভিষেকে সবচেয়ে খরচে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন।
আর সে রেকর্ড গড়ার মুহূর্তেই তাঁর পা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে পড়ে গেল, নো বল। শেষ হয়েও হলো না বাংলাদেশের ইনিংস। আরও একবার বল করতে ছুটতে হলো হার্ডিংকে। ফ্রি হিট অবশ্য খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
মোটে দুই রান নিতে পেরেছেন। সে দুই রানেই রেকর্ডের খাতা থেকে শচীন টেন্ডুলকার, স্টিভ ও মার্ক ওয়াহদের মুছে দিলেন। আর বসিয়ে নিলেন নিজের, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের নাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ২৯৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তৃতীয়বারের মতো এক ইনিংসে চার ব্যাটসম্যানের ফিফটি দেখল বাংলাদেশ দল।
এর মধ্যে সাকিবের ৫১ রানের ইনিংসটিই ব্যতিক্রম। বাকি তিনজনের রানই সমান। ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা তামিম ৮০ বলের ইনিংসে ৬৪ রান করে ফিরেছেন।

পাঁচে নামা মুশফিক দলের রানের গতি বাড়ানোর কাজ দারুণ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। ইনিংসের মধ্যভাগে নেমে ৫৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় তিনিও করেছেন ৬৪ রান। ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহর স্কোরও ৬৪ রানের। ৩ চার ও ৩ ছক্কার অপরাজিত ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর অবশ্য প্রয়োজন হয়েছে মাত্র ৪৩ বল।
বেশ নাটকীয়তার সঙ্গেই স্কোরটা ৬৪-তে থেমেছে মাহমুদউল্লাহর। শেষ ওভারে যখন ব্যাট করছিলেন, তাঁর রান ৪৯। প্রথম বলেই একস্ট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মারলেন। পরের বলে প্রান্ত বদল করলেন। এর মাঝে উইকেট পতন ও সাইফউদ্দিনের চারের পর যখন স্ট্রাইক পেলেন, তখন আর এক বল বাকি।
শেষ বলে সর্বোচ্চ যা করা সম্ভব সেটাই করেছেন। লেংথে পড়া বলটাকে ফেলেছেন লং অন দিয়ে। ৪২ বলে ৬২ রানে শেষ হতো মাহমুদউল্লাহর ইনিংস। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার জানালেন, ইনিংস এখনো শেষ হয়নি।
হার্ডিং বল করার সময় দাগ পেরিয়েছেন, তাই সেটি ‘নো বল’। আরেকটি বল খেলার সুযোগ পেয়ে দলকে আরও দুই রান এনে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ আর নিজেও থেমেছেন ঠিক ৬৪-তে।
তাতেই এক ঝটকায় নাম কাটা গেল ওয়াহ ভাইদের। ওয়ানডেতে এর আগে এক ম্যাচেই ঠিক ৬৪ রানের তিন ইনিংস দেখা যায়নি। এক দলের ইনিংসে তো নয়ই। ওয়ানডেতে একই ইনিংসে তিনজন ব্যাটসম্যানের একই রানে থামার ঘটনা এমনিতেই বিরল।
ব্যাটিং ধসে তিন ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দুই অঙ্কে পৌঁছানোর পর তিন ব্যাটসম্যানের একই সংখ্যায় থামা খুব একটা দেখা যায় না। এক ইনিংসে তিন ব্যাটসম্যানেরই একই রানে থামার ক্ষেত্রে ৬৪-ই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
এর আগে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি ছিল দুই দলের। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিডনিতে ২৯১ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেদিন ম্যাচ সেরা মাইকেল বেভান করেছিলেন ৭৪ রান। তবে রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন মার্ক, স্টিভ ওয়াহ ও ড্যারেন লেম্যান।
দুই, তিন ও সাতে নামা এই তিনজন ঠিক ৩৬ রানে আউট হয়েছিলেন, যেটা এক ইনিংসে তিন ব্যাটসম্যানের একই রানে আউট হওয়ার ১১ বছর পুরোনো এক রেকর্ডের পাশে বসিয়েছিল।
আর সে রেকর্ডেই জড়িয়ে আছে টেন্ডুলকারের নাম। ১৯৯০ সালের মার্চে ওয়েলিংটনে টানটান উত্তেজনার এক ম্যাচ খেলেছিল নিউজিল্যান্ড ও ভারত। মাত্র এক রানের ব্যবধানে ম্যাচটা জিতে নিয়েছিল সফরকারীরা।

ভারতের ২২১ রানে সেদিন সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন কপিল দেব। তাঁর ৪৬ রানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ছিলেন তিনজন। মনোজ প্রভাকর, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ও টেন্ডুলকার—তিনজনই করেছিলেন ৩৬।
অবশ্য বলসংখ্যা বিবেচনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন তিন ইনিংস ছিল সেগুলো। প্রভাকরের ইনিংসটি ছিল সে সময় অনুযায়ী বেশ গ্রহণযোগ্য, ৫৯ বলের। আর টেন্ডুলকারেরটি ছিল ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী, ৩৯ বলের।
সে তুলনায় মাঞ্জরেকারের ইনিংসটি ছিল টেস্ট মেজাজের। সেদিন ৮২ বল খেলেছিলেন বর্তমান ধারাভাষ্যকার।
Post Comment
No comments