অভিমানি মাহমুদউল্লাহর চাওয়া ‘স্বাস্থ্যকর সমালোচনা’
মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে অভিমান ঝরল। অভিমান তিনি করতেই পারেন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পরপরই যে সমালোচনার খড়্গ নেমে এসেছিল গোটা দলের ওপর। কিন্তু খেলোয়াড়েরা তো ইচ্ছা করে হারেন না। আজ পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৮৪ রানে জয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দিলেন সেই কথা, হারের পর কষ্ট তো খেলোয়াড়দের কম লাগে নয়, অন্যদের চেয়ে বরং বেশি কষ্ট লাগে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটাও যুক্তিসংগত। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দল হেরে গেলে সমালোচনা তো হবেই। কিন্তু সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা হাটে–মাঠে, চায়ের দোকানে নিজেদের মধ্যে আড্ডায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে আলোচনা করবেন, সেটি বিশ্বকাপের মতো আসরে খেলতে নেমে দলের মধ্যে কীভাবে প্রবেশ করে? এসব নিয়ে ক্রিকেটাররাই–বা কেন এত মাথা ঘামাবেন? উত্তরে মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে মানবিক অনুভূতিটা পরিষ্কার, ‘আমাদেরও সবকিছু স্পর্শ করে। আমরাও মানুষ। আমাদেরও অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের বাবা–মায়েরা টিভির সামনে বসে থাকে আমাদের খেলা দেখার জন্য। সন্তানেরা থাকে। তারা মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো এখন সবার নাগালে। সবারই মোবাইল ফোন আছে।’
জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের হয়ে খেলছেন, সমালোচনার সঙ্গে পরিচিত মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তিনি মনে করেন, সেই সমালোচনা যেন স্বাস্থ্যকর হয়, সমালোচনার কারণে যেন ক্রিকেটারদের সামাজিকভাবে হেয় হতে না হয়, ‘সমালোচনা তো হবেই। আমরাও সমালোচনা আশা করি। খারাপ খেললে সমালোচনা হবেই। কেন হবে না? কিন্তু সমালোচনার মাধ্যমে যখন কাউকে ছোট করা হয়, সেটিই খুব খারাপ লাগে।’
কোনো ক্রিকেটারই ইচ্ছা করে খারাপ খেলেন না, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে মাহমুদউল্লাহর কথা, ‘অনেক প্রশ্ন এসেছে আমাদের স্ট্রাইক রেট, আমাদের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ইত্যাদি নিয়ে। আমরা তো চেষ্টা করি। আপ্রাণ চেষ্টা করি। এমন নয় যে আমরা চেষ্টা করিনি। হয়তোবা ফল আমাদের পক্ষে আনতে পারিনি। সমালোচনা তো হবেই। কিন্তু এই সমালোচনা যেন স্বাস্থ্যকর হয়।’
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ক্রিকেটারদের আত্মনিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। এতে কষ্ট পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেটারদের আত্মনিবেদন নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন না তোলেন, সবার কাছে মাহমুদউল্লাহর অনুরোধ এটিই, ‘বাংলাদেশের জার্সিটা যখন গায়ে তুলি, আমাদেরও অনুভূতি হয়। দেশের জন্য সবই থাকে। ব্যথা থাকে, কারও অনেক ধরনের ইনজুরি থাকে। আমরা ওগুলো নিয়েই খেলি৷ দিনের পর দিন ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও খেলি। ভেতরের খবর অনেকেই জানে না। তো আমার মনে হয় এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলাও উচিত নয়।’
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডটা সহজেই উতরে যাবে বাংলাদেশ—প্রত্যাশাটা এমনই ছিল। কিন্তু এই রাউন্ডেই বেশ খানিকটা উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হলো। এখন সুপার টুয়েলভটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর হয়তো মনে হতে পারে, সামনের কঠিন ম্যাচগুলোর জন্য প্রস্তুতিটা ভালোই হলো বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য ব্যাপারটিকে এ চোখে দেখেন না। তাঁর উত্তরেও মিশে রইল একরাশ অভিমান, ‘আজকে ভালো খেলে পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়েছি দেখে অনেক কিছুই মনে হচ্ছে। আল্লাহর রহমতে আজ আমরা এমন পারফর্ম করেছি, যেটা আমরা দল হিসেবে চাইছিলাম। কিন্তু এক ম্যাচ খারাপ খেললেই আবার খুব করে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি, দল হিসেবে যেন খুব ভালো করতে পারি।’
উত্থান–পতনের বিষয়টিও স্বাভাবিকই মনে করেন অধিনায়ক। তবে তিনি দলের মধ্যে স্থিরতাকে জরুরিই মনে করছেন, ‘এ সংস্করণের ক্রিকেটে উত্থান–পতন থাকবেই। এ সংস্করণে আপনি কখনোই নিখুঁত ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। কখনো ভালো দিন যাবে, কখনো যাবে খারাপ দিন। দলের মধ্যে স্থিরতা থাকলে আমার মনে হয়, এ ব্যাপারগুলো আমরা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারব।’
No comments