Wednesday, December 22, 2021

ভারতকে হারিয়ে সাফের শিরোপা জিতল মেয়েরা

সাফের শিরোপা মেয়েদের
সাফের শিরোপা মেয়েদেরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ম্যাচের বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে পুরো স্টেডিয়ামে জ্বলে উঠল মুঠোফোনের আলো। মনে হচ্ছিল যেন হাজারো জোনাকি জ্বলছে মাঠে। দৃশ্যটাকে প্রতীকীই ধরা যায়। বয়সভিত্তিক ফুটবলেও যে আরও একবার আলো ছড়ালেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আজ সন্ধ্যায় কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়েছে ভারতকে। একমাত্র গোলটি করেছেন আনাই মগিনি।

২০১৮ সালে ভুটানে হওয়া সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টই এবার মেয়েদের বয়স এক বছর বাড়িয়ে আয়োজন করেছে সাফ। এবারও টুর্নামেন্টের ট্রফিটা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা।

গোটা ম্যাচেই আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের
গোটা ম্যাচেই আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের
ছবি: প্রথম আলো

১৯ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটিতে দলের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেন কোচ গোলাম রব্বানী। ওই ম্যাচে খেলা সোহাগী কিস্কু, স্বপ্না রানী, আনুচিং মগিনি ও আফঈদা খন্দকারের জায়গায় আজ একাদশে ঢোকেন মনিকা চাকমা, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও নীলুফার ইয়াসমিন।

অভিজ্ঞ আঁখি খাতুন, নীলুফার ইয়াসমিন, শামসুন্নাহার সিনিয়র আর আনাই মগিনির সামনে গিয়ে বাংলাদেশের রক্ষণদেয়াল ভাঙার সাহস হয়নি ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের। প্রথমার্ধে বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশের ফুটবলারদের পায়ে ঘুরল বল। মাঝমাঠে তো মারিয়া মান্দার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ! দুই প্রান্ত দিয়ে কখনো ঋতুপর্ণা, কখনো শাহেদা আক্তার আক্রমণে উঠেছেন। তহুরা খাতুন আর মনিকাও বক্সে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন।

টানা দ্বিতীয়বার সাফের বয়সভিত্তিক শিরোপা বাংলাদেশের মেয়েরা
টানা দ্বিতীয়বার সাফের বয়সভিত্তিক শিরোপা বাংলাদেশের মেয়েরা
ছবি: প্রথম আলো

এই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা অভিজ্ঞতা। তারুণ্যনির্ভর ভারতীয় মেয়েদের কাছ থেকে বারবার বল কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা মিলছিল না বাংলাদেশের। বক্সে ঢুকলেও ফিনিশিংটা ঠিকঠাকমতো হচ্ছিল না।

ম্যাচের ১৪ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া বল বাড়িয়ে দেন তহুরার উদ্দেশে। বলটি প্রথম চেষ্টায় ধরে ফেলেন ভারতীয় গোলরক্ষক আনশিকা। কিন্তু মুহূর্তেই বলটি তাঁর হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে ডান পায়ে শট নেন তহুরা। কিন্তু দুর্বল শট হওয়ায় গোললাইনের ওপরে ঘুরতে থাকে বল। অবশ্য গোলের দাবিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ঘিরে ধরেন নেপালি রেফারি অঞ্জনা রায়কে। কিন্তু তিনি মেয়েদের কথায় কোনো কানই দেননি।

এরপর ২৫ মিনিটে আনাই মগিনির শট ভারতের পোস্টে লেগে ফেরে। অথচ বক্সে তখন বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারই ছিলেন না। এরপর ৪৬ মিনিটেও শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট ক্রসবারে লেগে ফেরে।

পুরো ম্যাচে ৬৩ মিনিটে ভারতের একটাই ভালো আক্রমণ ছিল। লিনডা কম সেরতোর হেড অবশ্য সহজেই ধরে ফেলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক।

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ নেমেছিল দর্শকের ঢল
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ নেমেছিল দর্শকের ঢল
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের ৭৯ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে শাহেদা আক্তারের দারুণ একটা ব্যাকহিল থেকে বল পেয়ে আনাই নিলেন দুর্দান্ত এক শট। রংধনু শটটি বাঁক নিয়ে ভারতীয় খেলোয়াড় আনশিকার হাতে লেগে ঢোকে জালে। বাকি সময় অবশ্য চেষ্টা করেও আর কোনো দল গোল করতে পারেনি।

জাতীয় দলের সঙ্গে মুখোমুখিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েরা কখনোই জেতেনি। কিন্তু বয়সভিত্তিক ফুটবলে ভিন্ন চেহারার বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে যে নয়বার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় ভারতের মুখোমুখি হয়েছে, এর পাঁচবারই জিতেছে বাংলাদেশ। ৩টি ম্যাচ ড্র। একবার হার বাংলাদেশের। এবারের টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বেও বাংলাদেশ হারিয়েছে ভারতকে। এরপর হারাল ফাইনালে।

২০১৭ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উৎসব করে বাংলাদেশ। এবারও ফাইনাল দেখতে গ্যালারি উপচে পড়ে দর্শক। বেশির ভাগ দর্শকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। কণ্ঠে ছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চিৎকার। শীতের সন্ধ্যাটা শেষ পর্যন্ত রঙিন করেই বাড়ি ফিরেছেন দর্শকেরা।

বাংলাদেশ দল: রুপনা চাকমা, মারিয়া মান্দা (অধিনায়ক), শামসুন্নাহার সিনিয়র, আনাই মগিনি, আঁখি খাতুন, মনিকা চাকমা, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, নীলুফার ইয়াসমিন, শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার জুনিয়র।

 

করোনা রোগী শনাক্ত তিন শতাধিক

করোনা রোগী শনাক্ত তিন শতাধিক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনা সংক্রমিত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৫২ জন, যা আগের দিনের চেয়ে অর্ধশতাধিকের বেশি।

আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আগের দিনও করোনায় একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২৯১ জন।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৮ হাজার ৭৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮৭। আগের দিন এ হার ছিল ১ দশমিক ৩৯। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তি পুরুষ, তিনি ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ২৮০ জন। অর্থাৎ মোট শনাক্তের প্রায় ৮০ শতাংশ এ বিভাগের।

গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৬। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৫২ জনের। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫২ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৮১ জন সুস্থ হয়েছেন।

 

Tuesday, December 21, 2021

ঢাবিতে বিবাহিত ছাত্রীর হলের সিট বাতিলের বিধান বাদ দিতে আইনি নোটিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল
ফাইল ছবি

অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না এবং বিবাহিত হলে তা কর্তৃপক্ষকে না জানালে ছাত্রীর হলের সিট বাতিল হবে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলের এমন বিধান বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শামসুন নাহার হলসহ তিনটি ছাত্রী হলের প্রভোস্ট বরাবর আজ বুধবার এই নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শিশির মনির এই নোটিশ পাঠান।

আরও পড়ুন

ঢাবির হলে অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর থাকতে মানা, বিবাহিতরা পারেন ‘বিশেষ ক্ষেত্রে’

ঢাবির হলে অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর থাকতে মানা, বিবাহিতরা পারেন ‘বিশেষ ক্ষেত্রে’
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

নোটিশে শিশির মনির উল্লেখ করেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তিনি জানতে পারেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রী হলে বিবাহিত হওয়ার কারণে কতিপয় ছাত্রীর আবাসিক সিট বাতিল করা হয়েছে।

আইনি নোটিশে বলা হয়, শামসুন নাহার হলের আবাসিক ছাত্রীদের সিট বণ্টন সম্পর্কিত ও অন্যান্য শৃঙ্খলামূলক নিয়মবিধির ১৬ বিধিতে বলা হয়েছে, কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।

নোটিশে আরও বলা হয়, ওই বিধানের কারণে কার্যত বিবাহিত ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে।

আইনি নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। ২৮ (১) ও (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। বিবাহিত ছাত্রীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি সংবিধানের ২৭ ও ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

নোটিশের শেষাংশে বলা হয়, ‘অতএব, এই নোটিশ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।’

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা আহ্বান

প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ছাত্রী হলের এই নিয়ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে এই নিয়মের বিষয়েপর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাবির উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

 

একদিনে ৯০ হাজার শনাক্ত, তবু লকডাউন নয় বলছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আর দুইদিন পরই বিশ্বব্যাপী পালিত হবে খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস। তাইতো ওমিক্রনের প্রভাব সত্ত্বেও উৎসবের আগে নতুন করে কোনো কোভিড নিষেধাজ্ঞা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। খবর প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বরিস জনসন বলেছেন, ‘আজ আমরা মনে করি না যে, ক্রিসমাসের আগে কোনো কঠোর পদক্ষেপের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’

এদিকে, ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৯টার আগ পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৯০ হাজার ৬২৯ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয়েছে। যা একদিনে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে করোনা রোগী শনাক্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে।

 

সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নয়, সীমিত হচ্ছে পর্যটক যাতায়াত

 সেন্টমার্টিন

দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন সরকার ঘোষিত একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশবিরোধী আচরণের কারণে সেন্টমার্টিনের বিরল প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। যার কারণে এবার সরকার কঠিন কিছু নিয়ম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নতুন করে নিতে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, দ্বীপটিতে একসঙ্গে ৮০০ এর বেশি পর্যটকের অবস্থান নিষিদ্ধ এবং অবস্থানকালীন সময় হবে স্বল্পকালীন যা পূর্ব থেকে নিধার্ণ করা থাকবে, সেন্টমার্টিনে প্রবেশ করার পূর্বে কতৃর্পক্ষের অনুমতির নেওয়ার বিধান এবং সেখানে রাত্রী যাপন পুরোপুরি বন্ধ করা। এসব বিধান রেখে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত ২০১০) আবারও সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ ও জলবায়ূ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি এ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে বিবেচনার জন্য রয়েছে। কমিটির মতামত পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদিও টুরিস্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে এর বিরোধীতা করা হচ্ছে। তাদের মতে পর্যটন এলাকা ঘিরে অনেক ধরনের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বিপুল জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়বে। সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে সেন্টমর্ন্টিনের পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কমিটি দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে। ইতিমধ্যে এক দফা সভায় সেখানে রাত্রীযাপন নিষিদ্ধকরাসহ বেশ কিছু কঠোর শর্ত আরোপ করে আইন সংশোধনের পক্ষে সুপারিশ এসেছে। এটি আগামী সভায় চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

saint_Martin সেন্টমার্টিন

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সরকার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এসিএ ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু সেখানে এখনো প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যটক ভিড় করছে। প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই দ্বীপটির স্থায়ী বাসিন্দা প্রায় ৯ হাজার। এছাড়া পর্যটক মিলে প্রতিদিন দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের চাপ পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১৪টি বিধিনিষেধ জারি করলেও সেসব নিষেধাজ্ঞা মানছে না পর্যটকরা। যেসব নিষেধাজ্ঞা ছিল সেগুলো হচ্ছে, দ্বীপের সৈকত, সমুদ্র বা নাফ নদীতে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা। দ্বীপের সৈকতে মোটরসাইকেলের মত যান্ত্রিক বাহন থেকে শুরু করে সাইকেল, ভ্যান, রিকশার মতো অযান্ত্রিক বাহন চালানো বন্ধ। এছাড়া দ্বীপের চারপাশে নৌভ্রমণ, জোয়ার ভাটা এলাকায় পাথরের ওপর হাঁটা, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্লাশ ব্যবহার করে ছবি তোলা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়।

 

টিকার লক্ষ্য পূরণে মরিয়া ভারত, বিনা মূল্যে ভোজ্যতেল-মদ

টিকাদানের লক্ষ্য অর্জনে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য প্রণোদনা দিচ্ছে
Hafiz's SEO

ধীরগতিতে শুরু হলেও গত কয়েক মাসে কোভিড টিকাদান কর্মসূচিতে বেশ কিছু উল্লেখ করার মতো মাইলফলক অতিক্রম করেছে ভারত। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব মানুষকে টিকা দেওয়ার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ভারত কোনোভাবেই ছুঁতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা, এখন পর্যন্ত দেশটিতে টিকা গ্রহণের যোগ্য ৮৫ শতাংশ মানুষ এক ডোজ নিয়েছেন। এ ছাড়া টিকার পূর্ণ, অর্থাৎ দুই ডোজ পেয়েছেন ৫৫ শতাংশের কিছু বেশি। খবর বিবিসি অনলাইনের।

ভারতে এখনো কোটি কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা জটিল রোগে ভুগছেন কিংবা যাঁদের বয়স অনেক বেশি। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রকোপ এ উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। তাই টিকা নিতে আগ্রহ তৈরির জন্য কিছু রাজ্য প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

প্রণোদনা, নয়তো বাধ্য করা হচ্ছে

যাঁরা টিকা নিচ্ছেন, তাঁদের এক লিটার করে ভোজ্যতেল দিচ্ছে পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে বেশ ভালো ফলও পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষজন এক লিটার তেল পাওয়ার জন্য হলেও কেন্দ্রে এসে টিকা নিচ্ছেন।

রাজধানী দিল্লির প্রাক্‌–প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিশুদের ভর্তির জন্য অভিভাবকদের দুই ডোজ টিকার শর্ত দিয়ে তাঁদের টিকা নিতে বাধ্য করার এক পন্থা নিয়েছে।

ভারতে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। আমলাদের দিয়ে এসব পরিচালিত হয়। দেশটির কোটি কোটি মানুষ রাজ্যের কল্যাণমূলক কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এরপরও সাম্প্রতিক একটি ঘোষণা একেবারে ব্যতিক্রমী।

গত ২৩ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের একজন স্থানীয় কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়ে জানান, যাঁরা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাঁরা ১০ শতাংশ ছাড়ে মদ কিনতে পারবেন।

এ ঘোষণা আসার পর শাসক দল বিজেপির একজন আইনপ্রণেতা অভিযোগ তোলেন, এতে মদ্যপান বেড়ে যাবে। ফলে এক দিন পর ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।

মহামারিবিদ চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া বলেন, মধ্যপ্রদেশ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার ওই উদ্যোগ ছিল ‘বিকৃত প্রণোদনা’। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে সাময়িক কিছুটা ফল পাওয়া গেলেও কুফল হবে বেশি। দীর্ঘ মেয়াদে না চাইলেও এর মূল্য দিতে হবে।
তবে মধ্যপ্রদেশের একটি জেলার নেওয়া এমন উদ্যোগ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারত সরকার কতটা মরিয়া।

টিকা না নেওয়ার নানা কারণ

বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে ভারতে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর প্রথম কয়েক মাসে টিকা সরবরাহের যে সংকট দেখা দিয়েছিল, সেটা এখন দূর হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে এ–ও বলছেন, ভারতে এখনো কেন কোটি কোটি মানুষকে কোভিডের টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তার কারণ খুঁজে বের করাও দুঃসাধ্য।

লাহারিয়া বলেন, সরবরাহ নিশ্চিত হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে শতভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। অনেক মানুষকে টিকা নেওয়ার জন্য বহু দূরের পথ পাড়ি দিতে হয়, অথবা অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, টিকা নিতে যাওয়ার কারণে তাঁরা তাঁদের অর্ধেক দিনের মজুরি থেকে বঞ্চিত হন।

এই মহামারি বিশেষজ্ঞের মতে, কেন অনেক মানুষ টিকা নিতে আসছেন না, সেটা সরকারকে খুব সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে বের করতে হবে।

লাহারিয়া বলেন, কেন মানুষ টিকা নিতে আসছেন না—বিশ্লেষণ করে এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়ার জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন, সেগুলো সরকারের কাছে নেই। জাতীয় পর্যায়ে কোন কোন স্থানগুলোতে টিকা নেওয়ার হার দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় কম, সেগুলো সরকারকেই চিহ্নিত করতে হবে।

দ্বিতীয় ডোজে আগ্রহ নেই

আরেকটি কারণ হতে পারে, অনেক মানুষ হয়তো করোনাভাইরাসে একবার আক্রান্ত কিংবা টিকার এক ডোজ নেওয়ার পর ভাবছেন, তাঁরা আর আক্রান্ত হবেন না।

গত নভেম্বরে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্ডাভিয়া জানান, প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন দেশের এমন ১২ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসেননি।

ভারতে নতুন করে করোনা শনাক্তের হার এখন কম। এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারতে দৈনিক করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের আশপাশে বা কম।

সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে টিকা নিতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার অনেকের ধারণা, ভাইরাসের চেয়ে টিকা বিপজ্জনক।

বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে উদ্বেগ

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ রিজো এম জনের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো, সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে জটিল রোগে ভোগা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বিপদে পড়বেন।

ভারতে এখনো ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এখনো টিকা নেননি কিংবা নিলেও মাত্র এক ডোজ টিকা নিয়েছেন।

এম জন বলেন, দেশজুড়ে এমন অবস্থা কেন তৈরি হলো, তা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। দরকার হলে ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে টিকা দিয়ে আসতে হবে।

প্রণোদনা কতটা কাজে দেয়

টিকা নিতে আগ্রহী করতে এ ধরনের প্রণোদনা দিয়েও আসলেই কোনো লাভ হবে কি না, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
শুধু ভারত নয়, টিকা নেওয়ার জন্য আরও অনেক দেশে এমন লোভ দেখানো হচ্ছে। যেমন রাশিয়ায় টিকা নিতে অনাগ্রহী মানুষের জন্য র‌্যাফেল ড্রর ব্যবস্থাও করেছে। এতে টিকা নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে অনেকে বরফে চালানো এমন একধরনের মোটরসাইকেল বা গাড়ি জেতার সুযোগ পাচ্ছেন।

একই পথে হেঁটেছে হংকং। টিকা নিলে বিলাসবহুল বাড়ি, টেসলার গাড়ি, স্বর্ণের বার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণার পর হাজার হাজার মানুষের হুড়োহুড়ি লেগে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের সরকারও টিকাদানে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা হিসেবে নানা ধরনের উপহার ও লটারি ড্রর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরোর গবেষকেরা ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, প্রণোদনা দেওয়ায় টিকাদানের হার বাড়ে না।

গবেষকেরা লিখেছেন, টিকাদানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য পেতে চাইলে তাৎক্ষণিক কিছু প্রাপ্তির বদলে শক্ত ও বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়ন করাটা দরকার। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ কিংবা সরকারি বিভিন্ন কৌশল প্রণয়নের মতো কাজ করা যেতে পারে।

অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওহাইও অঙ্গরাজ্যে টিকা নিতে উৎসাহিত করতে ১০ লাখ ডলার লটারি আদৌ যে কাজ করেছে, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

লাহারিয়া বলছেন, কোভিড টিকাদান কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া স্থাপন করাটা অপরিহার্য।

 

সেই দুই জঙ্গির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই পুলিশের কাছে

অভিজিৎ রায়
অভিজিৎ রায়

বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন এখন কোথায় আছেন; তিনি দেশে, নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন—এ বিষয়ে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

তবে পলাতক জঙ্গি নেতা জিয়াউল হকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাকে আমরা খুঁজছি। সে অত্যন্ত চতুর লোক। আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী সে হয়তো অন্য কোনো দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে। আমাদেরও চেষ্টা অব্যাহত আছে, তাকে ধরে নিয়ে আসার জন্য এবং আইনে তার যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি কার্যকর করার জন্য।’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

বিদেশে পলাতক আসামিদের বিষয়ে ও ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। অভিজিৎ হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির অন্য দেশে গা ঢাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

এই দুই জঙ্গির বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা সৈয়দ জিয়াউল হক (যিনি মেজর জিয়া নামে পরিচিত) ও তাঁর সহযোগী আকরাম হোসেন নতুন করে আলোচনায় আসেন।

এ বিষয়ে গতকাল ঢাকার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘হয়তো মার্কিন এ উদ্যোগের (পুরস্কার ঘোষণা) ফলে আমাদের পলাতক খুনিদের ধরার যে প্রচেষ্টা, তাতে সহায়ক হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে সফল হয়েছে। অনেক দেশে যখন তথ্য পাওয়া যায় না, আমি শুনেছি, ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও একইভাবে হয়েছে। এ পলিসি, কৌশল অনেক সময় সফল হয়। আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর তিন পলাতক খুনি, যাঁদের অবস্থান জানি না, তাঁদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি। কেউ যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন, অবশ্যই সরকার তাঁকে পুরস্কার দেবে। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) এ রকম দিয়েছে।’

এদিকে মার্কিন ঘোষণার বিষয়ে পুলিশ বলছে, পুরস্কার ঘোষণার আগেও এই আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর ছিল, এখনো সেটা অব্যাহত আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দণ্ডিত পলাতক দুই আসামির অবস্থান শনাক্ত করা গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

দুজনের বিষয়ে তথ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, অভিজিৎ যেহেতু তাদের দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) নাগরিক, তারা একটি ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার আগে থেকেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছিল, এখনো একই রকম গুরুত্ব দিয়েই আসামিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার মতাদর্শের অনুসারী আনসার আল ইসলামের (আগের নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার প্রধান মেজর জিয়া। এর আগে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তখন জানা গিয়েছিল, জিয়া এক জায়গায় বেশি দিন থাকেন না। জিয়া রাজধানী বা এর আশপাশে অবস্থান করতেন বলেও বিভিন্ন সময়ে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে ২০১৭ সালের পর তাঁর অবস্থানের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আর আকরাম হোসেনের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আকরাম হোসেন ওরফে আবীর আনসার আল ইসলামের আসকারি সদস্য (জঙ্গিদের কথিত গোয়েন্দা শাখার সদস্য)। তিনি ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড় এলাকায় তাঁর পরিবার থাকে। অভিজিৎ রায়কে হত্যার সময় অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে জিয়া ও আকরাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। হামলায় আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালত পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিদের চারজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। জিয়া ও আকরাম পলাতক।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত হিসেবে আরও পাঁচজনের নাম পেয়েছিল সিটিটিসি। তাঁরা হলেন সেলিম ওরফে হাদী, হাসান, আলী ওরফে খলিল, আনিক ও অন্তু। কিন্তু এঁদের প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি বিধায় অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়নি। এঁদের পরে যদি শনাক্ত করা যায়, তখন তাঁদের আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া জড়িত আরেক জঙ্গি মুকুল রানা বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ায় তাঁকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

যে কারণে বিসিবিতে থাকছেন না আকরাম খান

অবশেষে আকরাম খানের স্ত্রীর সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসই সত্যি হলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক আকরাম খান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) নিজ বাস ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের আকরাম বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই পদে থাকছি না। আমি ৮ বছর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে ছিলাম। এই সময়টাতে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ভাইয়ের কাছ থেকে। কিন্তু তার সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের চূড়ান্তভাবে জানাব। যেহেতু আপনারা এখানে এসেছেন। এতটুকুই আপনাদের বলার আছে।’

পদে না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করে আকরাম খান বলেন, পারিবারিক কারণেই আমি আর এই পদে থাকছি না। তবে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন তিনি।

এরআগে, সোমবার বিকেলে আকরামের স্ত্রী সাবিনা আকরাম তার ফেসবুক পোস্ট দিয়ে জানান, ‘ক্রিকেট অপারেশন্স ছেড়ে দিচ্ছে আকরাম খান।’ সাবিনা আকরাম আরও লিখেছেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে জীবনের বড় একটা সময় পড়ে থাকলো আকরাম। আমরা চাই এখন সে ক্রিকেটের পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা তথা পরিবারকে আরও সময় দিক। কিন্তু ক্রিকেট অপারেশন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকলে তো সেটা সম্ভব নয়। তাই আমরা পারিবারিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আকরাম আর ক্রিকেট অপারেশন্সে থাকবে না। সে নিজ মুখেই আপনাদের (মিডিয়া) ’কে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানাবে।’

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ী অধিনায়ক আকরাম খান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হন ২০১৪ সালে। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে। এরপর থেকেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়লো

 

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও কোভিড ইউনিটের প্রধান ডা. মো. ইউনুস স্বাক্ষরিত বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়া ২০ হাজার ৯০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২৯১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। যেখানে গতকাল ছিলো ২৬০ জন। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪ জনে। যেখানে শনাক্তের হার ১ দশমিক ৩৯ গতকাল ছিলো ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ২৬৪ জন গতকাল ছিলো ২৩৬ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭১ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তি পুরুষ। তার বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। মারা যাওয়া ব্যক্তি সিলেট বিভাগের বাসিন্দা।    

 

১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

 সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো কুয়াশায় ঢাকা পড়ে পাহাড়। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আজ সোমবার তোলা ছবি

দেশজুড়ে শীত বেড়ে গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এক দিনের ব্যবধানে দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। ফলে দেশের অন্তত ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, কাল মঙ্গলবারও দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ আরও নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

এদিকে আজ সোমবার ভোরে রাজধানীতে শীতের অনুভূতি হঠাৎ বেড়ে যায়। তবে বেলা গড়াতে রোদ বেড়ে শীতের অনুভূতি কমে আসে। সন্ধ্যা থেকে আবারও হিম হিম শীতের বাতাস বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা আবারও কমে আসে। আজকে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। কিন্তু ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা, অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে চলে আসে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল হয়ে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত শীতের অনুভূতি বেড়েছে।

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি। রাস্তার পাশে ফুটপাতে স্বল্পমূল্যে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আবদুল হামিদ সড়ক, পাবনা, ২০ ডিসেম্বর
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি। রাস্তার পাশে ফুটপাতে স্বল্পমূল্যে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আবদুল হামিদ সড়ক, পাবনা, ২০ ডিসেম্বর
ছবি: হাসান মাহমুদ

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, অনুকূল পরিস্থিতির কারণে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতল বাতাসের প্রবাহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের তীব্রতা একই রকমের থাকতে পারে। এরপর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আজ থেকে গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নঁওগা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও যশোরে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে বেশি নেমেছে চুয়াডাঙ্গায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া যশোরের তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমেছিল। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ ও এর কাছাকাছি তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

রংপুরে দুই দিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। কনকনে শীতে তাই জড়োসড়ো হয়ে কাজে যাচ্ছেন এক দিনমজুর। চিলারঝার, শহরতলি, রংপুর, ২০ ডিসেম্বর
রংপুরে দুই দিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। কনকনে শীতে তাই জড়োসড়ো হয়ে কাজে যাচ্ছেন এক দিনমজুর। চিলারঝার, শহরতলি, রংপুর, ২০ ডিসেম্বর
ছবি: মঈনুল ইসলাম

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, আগামীকাল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ভোরের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।

 

Sunday, December 19, 2021

বারোমাসি কাঁঠাল চাষে আগ্রহ বাড়ছে

বাংলাদেশে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল একটি। বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষায় কাঁঠাল পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার মানদণ্ড বিবেচনায় কাঁঠাল জাতীয় ফলের মর্যদা লাভ করেছে। দেশে নানা জাতের কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন জাতের কাঁঠালের মধ্যে গোলাকৃতির কাঁঠাল একটি। এই কাঁঠাল সারা বছর উৎপন্ন হয় বলে একে বারোমসি কাঁঠাল বলা হয়। এই কাঁঠালগুলো দেখতে তাল বা জাম্বুরার মতো। সারা দেশে এই কাঁঠাল উৎপন্ন হয় না। সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এমন প্রজাতির কাঁঠাল দেখা গেছে। দর্শনার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে এই কাঁঠাল দেখে এবং এই কাঁঠাল সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকে। 

বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে কাঁঠাল উৎপাদনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্হানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে এবং মোট উৎপাদন ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ টন। তবে কাঁঠাল উত্পাদনে প্রথম স্হানটি ধরে রেখেছে ভারত।

কৃষিবিদেরা জানান, আমাদের দেশে কাঁঠালের অনেকগুলো প্রকার রয়েছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের কাঁঠালের মধ্যে এই গোলাকৃতির কাঁঠাল বেশ সুস্বাদু এবং সুমিষ্টি। এই কাঁঠাল সারা বছর ধরে পাওয়া যাওয়া বলে এর কদর ও জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। আগ্রহী চাষিরা এই গোলাকৃতির কাঁঠাল চাষে এগিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্হানে গোলাকৃতির কাঁঠালের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়ে গেছে। সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এই কাঁঠাল ব্যাপক ভিত্তিতে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের মানুষ সারা বছর ধরে এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। 

 

দলের সবার করোনা নেগেটিভ, কাল থেকে অনুশীলনে নামছে টাইগাররা

 মঙ্গলবার থেকে অনুশীলন শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ দল। [ছবি: সংগৃহীত]

শেষ করোনাভাইরাস পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাকি সব সদস্য করোনা নেগেটিভ চিহ্নিত হয়েছে। এতে সব শঙ্কা দূরে ঠেলে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে নিউজিল্যান্ডে অনুশীলন শুরু করবে টাইগাররা। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে এক ভিডিও বার্তায় নিউজিল্যান্ড থেকে এই স্বস্তির খবর জানিয়েছেন, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।

ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে সুজন বললেন, ‘গতকাল (১৯ ডিসেম্বর) আমাদের একটি কোভিড টেস্ট ছিল এখানে। আজ সকালে রেজাল্ট এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই নেগেটিভ। এই নেগেটিভ হওয়ার কারণে আমরা এখান (কোয়ারেন্টাইন) থেকে আগামীকাল বের হতে পারব এবং অনুশীলনে যেতে পারব। পাশাপাশি ২১ ডিসেম্বর থেকে টাইগাররা জিমের পাশাপাশি মাঠে অনুশীলনেরও সুযোগ পাবে।’ 

সুজন বলেন, ‘কাল আমাদের সোয়া ১০টা থেকে অনুশীলন শুরু লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে, যেখানে আমরা জিমের সুযোগটাও পাব। ওখানে অনুশীলন শেষে আমরা হোটেলে উঠে যাব। এরপর আমরা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারব, ট্রেনিং করতে পারব, সবই করতে পারব। নিজেদের তৈরি করতে পারব প্রথম টেস্ট ম্যাচের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে প্রত্যাশা, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন এখানে সুস্থ থাকি এবং ভালো একটি সিরিজ খেলতে পারি।’

উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ড সফরের উদ্দেশে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। গত বছর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করলেও এবার বিসিবির বিশেষ সুপারিশে ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইনের অনুমতি দেয় নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বিমানে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে থাকায় টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটার সহ ৯ জনকে ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।

তবে গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) দলটির বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়ে অনুশীলনে নামেন। অনুশীলনের অনুমতি পেলেও হেরাথ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আবারও কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় বাংলাদেশ দলকে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ক্রিকেটাররা। তবে সবাই সফলভাবে কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন করেছেন। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথকে পাচ্ছে না সফরকারীরা। হোটেল থেকে এই লঙ্কানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডের কোভিড সেন্টারে। বর্তমানে সেখানেই আছেন তিনি।

সিরিজের প্রথম ম্যাচটি গড়ানোর কথা আছে আগামী ১ জানুয়ারি, বে ওভালে। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি হওয়ার কথা ৯ জানুয়ারি হ্যাগলি ওভালে।

 

খালি পেটে গ্রিন টি নয়

 খালি পেটে গ্রিন টি নয় 

ওজন কমাতে বা অভ্যাসগত কারণে বা নানা স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অনেকেই খাদ্য তালিকায় গ্রিন টি রাখেন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখতেও গ্রিন টি বেশ উপকারী। এই চা ত্বক ও চুলও ভালো রাখতে সাহায্য করে। অনেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে দিনের শুরুতেই গ্রিন টি পান করে থাকেন। 

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, খালি পেটে গ্রিন টি পান করা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ এতে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হয়। যেমন- 

1খালি পেটে গ্রিন টি পানে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে

  • গ্রিন টি'তে বিদ্যমান ট্যানিন উপাদান পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে তোলে। ফলে পেট ব্যথা হয়। এছাড়া খালি পেটে এটি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত অ্যাসিডের ফলে বমিভাব অনুভূত হতে পারে। 
  • পেপটিক আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে আক্রান্ত রোগীদের সকালে গ্রিন টি না পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, এ সময় গ্রিন টি পানে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। 
  • খালি পেটে গ্রিন টি আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই, যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগেন তাদের গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। 
  • খালি পেটে গ্রিন টি পানে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। গ্রিন টি'তে থাকা ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, যা কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন রিলিজ করে। ফলে রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, যা হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য মোটেও ভালো নয়। 
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে গ্রিন টি পান করা ভালো; তবে তা স্ন্যাক্সের সাথে। গ্রিন টি পান করলে সঙ্গে বিস্কুট, ফল বা অন্য কিছুও খাওয়া উচিত। অন্যথায়, গ্রিন টি উপকারের বদলে অপকারই বেশি হতে পারে।

 

Thursday, December 16, 2021

‘ফাইনালিসিমা’-তে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি-আর্জেন্টিনা

 ‘ফাইনালিসিমা’-তে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি-আর্জেন্টিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইউরো জয়ী ইতালি ও কোপা আমেরিকা জয়ী আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে কিনা তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। এবার বাস্তবরূপ পেতে যাচ্ছে সে ম্যাচ। আগামী বছর পহেলা জুন মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল।

তবে এই খেলা কোথায় হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। উয়েফা ইঙ্গিত দিয়েছে যে লন্ডনেই এই খেলা হতে পারে।

কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা এবং ইউরোয় ইতালির জয়ের পরই দীর্ঘদিন ধরে সমর্থকরা দুই ফুটবলপাগল মহাদেশের দুই চ্যাম্পিয়ন দেশের মধ্যে একটি ম্যাচের আয়োজন নিয়ে দাবি তুলছিলেন।

সমর্থকদের দাবি মেনে ম্যাচ হবে শোনা গেলেও কোথায়, কবে হবে, সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। 

লাতিন আমেরিকার লিওনেল মেসিদের ফ্লেভার ফুটবলের সঙ্গে কিয়েলিনি-বনুচ্চিদের ইতালির জমাট রক্ষণের মোকাবিলা যে নিঃসন্দেহে প্রচুর সমর্থক আগ্রহ ভরে দেখবেন, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দুই চ্যাম্পিয়ন দলের এই ম্যাচকে ‘ফাইনালিসিমা’ নামকরণ করা হয়েছে। উয়েফা এক টুইটের মাধ্যমে তথ্যটি জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে: যুক্তরাষ্ট্র

 যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর

২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। এর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন তদন্ত কার্যক্রম এবং গ্রেফতারের ঘটনাও বেড়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী তৎপরতা কম ছিল। ওই বছর সন্ত্রাস সম্পর্কিত তদন্ত ও গ্রেফতারের ঘটনাও তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। এ কারণে সন্ত্রাসী তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।

এতে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিনটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। তবে এসব হামলায় কারও মৃত্যু হয়নি। আগের বছরগুলোর মতো এবারও বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশভিত্তিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আইএসআইএস বা একিউআইএসের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে।

সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার একটি চিত্রও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সম্পর্কিত মাত্র ১৫ ভাগ মামলার আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। সক্ষমতার ঘাটতিতে থাকা বাংলাদেশের বিচার বিভাগে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত অনেক মামলা এক দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে, যা বৈশ্বিক মহামারিতে আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে বাংলাদেশ তার শূন্য সহনশীলতা এবং দেশের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার হতে না দেওয়ার নীতি পুনর্ব্যক্ত করে চলেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

দেড় ঘণ্টা আগে জানানো হয় অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হয়েছে: কোহলি

 বিরাট কোহলি, ফাইল ছবি

ওয়ানডে ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে সরানোর পর এতদিন বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। অবশেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছেন তিনি এবং জানিয়েছেন তার সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কোহলি। সেখানে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার বলেন, ‘টেস্ট দল ঘোষণার ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে বিসিসিআই থেকে আমাকে কল দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচক আমার সঙ্গে টেস্ট দল নিয়ে আলোচনা করেন। ফোনকল শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি আমাকে জানান, পাঁচজন নির্বাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমাকে আর ওয়ানডের নেতৃত্বে রাখা হবে না। এ বিষয়ে পূর্বে কোনো আলোচনা হয়নি।’

এ সময় টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার ব্যাপারেও কথা বলেছেন তিনি। বিরাট কোহলি বলেন, ‘যখন আমি বিসিসিআইকে জানাই যে, টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাই, তখন তারা সুন্দরভাবেই এটি গ্রহণ করেছে। আমি তাদের বলেছি, এটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।

আমি সেই সময় জানিয়েছিলাম, ওয়ানডে ও টেস্টে নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চাই। আমার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ছিলাম। একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলাম যে, কর্মকর্তা এবং নির্বাচকরা যদি মনে করেন আমার অন্য ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত নয়, তবে তাও ভালো।’

 

মুখোমুখি অবস্থানে বিরাট কোহলি ও বিসিসিআই!

 সৌরভ গাঙ্গুলি ও বিরাট কোহলি, ফাইল ছবি

অবস্থা দেখে এখন যা মনে হচ্ছে তা হলো, অধিনায়কত্ব হারানোর বিষয়ে বিরাট কোহলির বিবৃতি নিয়ে অখুশি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন বোর্ডের এক কর্মকর্তা। তার দাবি, কোহলি মিথ্যাচার করছেন। খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে।

এর আগে সম্প্রতি বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি জানিয়েছিলেন, কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটি মানেননি এবং নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ওয়ানডের অধিনায়ক থেকেও তাকে সরানো হয়েছে। কারণ, সাদা বলের ফরম্যাটে দুই অধিনায়ক রাখা কঠিন বলে মত বিসিসিআইয়ের।

তবে গতকাল বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কোহলি। সেখানে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার বলেন, ‘টেস্ট দল ঘোষণার ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে বিসিসিআই থেকে আমাকে কল দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচক আমার সঙ্গে টেস্ট দল নিয়ে আলোচনা করেন। ফোনকল শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি আমাকে জানান, পাঁচজন নির্বাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমাকে আর ওয়ানডের নেতৃত্বে রাখা হবে না। এ বিষয়ে পূর্বে কোনো আলোচনা হয়নি।’

virat-rohitভারতের দুই অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি

এ সময় টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার ব্যাপারেও কথা বলেছেন তিনি। বিরাট কোহলি বলেন, ‘যখন আমি বিসিসিআইকে জানাই যে, টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাই, তখন তারা সুন্দরভাবেই এটি গ্রহণ করেছে। আমি তাদের বলেছি, এটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।

আমি সেই সময় জানিয়েছিলাম, ওয়ানডে ও টেস্টে নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চাই। আমার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ছিলাম। একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলাম যে, কর্মকর্তা এবং নির্বাচকরা যদি মনে করেন আমার অন্য ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত নয়, তবে তাও ভালো।’

ইন্ডিয়া টুডেকে বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা জানাইনি বলে বিরাট কোহলি যে দাবি করেছে তা সে বলতে পারে না। সেপ্টেম্বরেই তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সে নিজ থেকেই ছেড়ে দিলো। এখন সাদা বলে দুজন অধিনায়ক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল আমাদের জন্য।’

 

অর্থনীতিতে যত অগ্রগতি হলো

 ফাইল ছবি

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হতো সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আনা এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি হলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান হয়নি, কমেনি আয়ের বৈষম্য। 

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রথম আবাসিক প্রতিনিধি ছিলেন নরওয়ের ইয়ুস্ট ফালান্দ। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ফালান্দ ও মার্কিন অর্থনীতিবিদ জ্যাক আর পার্কিনসন যৌথভাবে একটি বই লেখেন। যার নাম ছিল বাংলাদেশ: দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট। যেখানে তারা লিখেছেন, অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে না।

তাদের অনুমানের অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। ইয়ুস্ট ফালান্দের সম্পাদনায় আরেকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। নাম ছিল এইড অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স: দ্য কেস অব বাংলাদেশ। সেখানেও তিনি পরিষ্কারভাবে লিখেছিলেন, টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে বহু বছর বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।

১৯৫৯-৬২ সময়ে অস্টিন রবিনসন ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৩ সালে তিনি ইকোনমিক প্রসপ্রেক্টস অব বাংলাদেশ নামে একটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে তিনি লিখেন, বাংলাদেশে উৎপাদন যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে জনসংখ্যা। এর ফলাফল হচ্ছে—দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, মৃত্যু ইত্যাদি।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭০ ডলার। অস্টিন রবিনসন এক হিসেবে বলেছিলেন, যদি বাংলাদেশ ২ শতাংশ হারে মাথাপিছু আয় বাড়ায়, তাহলে লাগবে ১২৫ বছর, আর ৩ শতাংশ হারে আয় বাড়লে লেগে যাবে ৯০ বছর। এটা সম্ভব যদি কেবল বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশ তা পারবে কি না, তা নিয়ে তার গভীর সংশয় ছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। বিশ্বব্যাংক তখন বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল।’ সেই বিশ্বব্যাংকই ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ২০২০: একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত সমীক্ষা শিরোনামে বাংলাদেশ নিয়ে একটি গবেষণা করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় যাবে—এটাই ছিল গবেষণার বিষয়বস্তু।

garments-workerপোশাক শ্রমিক

বিশ্বব্যাংকের সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা ছিল, দারিদ্র্যের হার দ্রুত নামিয়ে আনা, প্রবৃদ্ধির হার ৭-৮ শতাংশে উন্নীত করা, ৫ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ, পরিবেশের কার্যকর সংরক্ষণ, ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৮০০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনা ইত্যাদি। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব কটি লক্ষ্যই অর্জন করেছে বাংলাদেশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়েও রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত বইটিতে নুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এখন যদি কেউ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনের এবং সরকারের প্রতিক্রিয়ার কথা স্মরণ করে তাহলে মনে হবে বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে ৩০ বছরে তেমন কিছু বদলায়নি, আজও বাংলাদেশ এবং তার উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি।’

এসঅ্যান্ডপির পূর্বাভাস অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তির প্রভাব মোকাবিলা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগত স্বাভাবিক হবে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। এই বছর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। করোনার ধাক্কা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আগামী এক থেকে দুই বছর সম্ভব হবে।

ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরণের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সিইবিআর তাদের রিপোর্টে বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল বেশ ভালো এবং এটা ঘটেছে দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও। গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে গড়ে ১ শতাংশ হারে।

বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় কোভিড-১৯ যেভাবে ছড়িয়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ অনেক সীমিত। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মারা গেছে ৭ হাজার ৫২ জন। প্রতি এক লাখে মাত্র ৪ জন। যদিও এই মহামারির কারণে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ছিল সীমিত, তা সত্ত্বেও অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে এটি। কারণ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা গিয়েছিল কমে আর আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

সিইবিআর এর পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০২১ সাল হতে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটবে গড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। তবে এর পরের দশ বছরে এই হার কিছুটা কমে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।

takaবাংলাদেশি মুদ্রা টাকা

সিইবিআর এর সূচক অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ: ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্থানকেই সবচেয়ে নাটকীয় বলতে হবে। বর্তমান র্যাংকিং ৪১ থেকে বহু দেশকে টপকে বাংলাদেশ পৌঁছাবে ২৫ নম্বরে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৪১। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪। এর পাঁচ বছর পর ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩৫ সালে ঢুকবে প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায়। (তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১, সিইবিআর)

 

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে: শ্রিংলা

 ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ঢাকা সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার পর এ কথা বলেছেন এই কূটনীতিক। খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আলোচনায় এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে আমরা আমাদের (ভারত-বাংলাদেশ) সম্পর্ককে খুব উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটাকে ‘সোনালী অধ্যায়’ (স্বর্ণযুগ) বলে উল্লেখ করেছেন। আলোচনায় আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দিক ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ১৯৭১ সালের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার এবং সেই বিষয়ে আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারি তা।’

রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ এবং বাংলাদেশের নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনায় করোনা মহামারি মোকাবিলায় সহযোগিতার প্রসঙ্গও ওঠে আসে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘করোনাকালীন বাংলাদেশকে ওষুধ ও টিকা প্রদানে বেশ তৎপর রয়েছে ভারত। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ২.১৮ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছি। তরল মেডিকেল অক্সিজেনের ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছি।’

 

Monday, December 13, 2021

ফাইভ-জি বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে

ফাইভ-জি বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে

১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে বাংলাদেশ ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এল। বিজয়ের মাস, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরাট অর্জন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ছয়-সাতটি দেশ এ প্রযুক্তির আওতায় এসেছে। মুঠোফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ-জি। বর্তমানে চলমান ফোর-জি এলটিই (লং টার্ম ইভল্যুশন) নেটওয়ার্কের আপগ্রেড ভার্সনকে ফাইভ-জি বলে।

এলটিই বলতে মুঠোফোন এবং ডাটা টার্মিনালগুলোর উচ্চগতির তথ্য আদান-প্রদানে বেতার যোগাযোগকে বোঝায়। এ প্রযুক্তিতে ল্যাটেন্সি কম হওয়ায় বাড়বে নেটওয়ার্ক রেসপন্স। ল্যাটেন্সি বলতে কোনো সাইট অ্যাকসেস করা এবং তার রেসপন্স করার মধ্যবর্তী সময়কে বোঝায়। ফোর-জির চেয়ে ফাইভ–জি নেটওয়ার্কে ১০ গুণ বেশি দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার এমবিপিএস গতিতে ডাউনলোড করা যাবে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

গতির এই হিসাব প্রথম শুরু হয় ওয়ান–জি দিয়ে ১৯৭৯ সালে এনালগ পদ্ধতির মাধ্যমে, যেখানে দুটি ডিভাইসের মধ্যে শুধু কল করা যেত। এরপর আসে টু–জি (১৯৯১ সালে)।

এখানে দুটি মুঠোফোন ডিভাইসের মধ্যে কল করার পাশাপাশি টেক্সট ম্যাসেজ পাঠানো সম্ভব হতো। তারপর আসে থ্রি–জি (১৯৯৮ সালে), যা টেক্সট ম্যাসেজ, কল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সঙ্গে ব্রাউজ করার সুবিধা ছিল। থ্রি–জির সব সুবিধাসহ ফোর–জি আসে ২০১০ সালে। এতে সহজেই একসঙ্গে অনেকগুলো ডিভাইস কানেক্ট করা এবং যেকোনো বড় সাইজের ফাইল শেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়। পরে ফোর–জিকে আরও দ্রুত করার জন্য এলটিই প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয় এবং ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা অন্যান্য মুঠোফোন যন্ত্রে মুঠোফোন ব্রডব্যান্ড, মুঠোফোন আলট্রা ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট সেবা অন্তর্ভুক্ত হয়।

ফোর–জি নেটওয়ার্কে আরও যেসব সুবিধা বিদ্যমান, সেগুলোর মধ্যে সংশোধিত মুঠোফোন ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোন, গেমিং, এইচডিটিভি, হাইডেফিনেশন মুঠোফোন টিভি, ভিডিও কনফারেন্স, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জুনে মুঠোফোনে ফোর–জি (এলটিই) সেবা শুরু হয়। ফাইভ–জি প্রযুক্তিতে অনেকগুলো ডিভাইসকে একত্রে কানেক্ট (ইন্টারনেট অফ থিংস এর মতো) করে রাখার জন্য বিশেষ প্রযুক্তিসহ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে বেশি ব্যান্ডউইথ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা রাখে। আর মূলত এ বিষয়ের ওপর লক্ষ্য করেই ফাইভ-জি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু।

থ্রি–জি বা ফোর–জির মতো ফাইভ–জি প্রযুক্তি শুধু মুঠোফোন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয় বরং ওয়াই–ফাই এর মতো যেকোনো ডিভাইসেও থাকতে পারবে, ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সবাইকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হবে এবং মেশিন, অবজেক্ট ও ডিভাইসগুলোকে একই সূত্রে গাঁথবে। এমনকি পারসোনাল কম্পিউটারেও একটি চিপ লাগানো যাবে। ফলে তথ্য আদান-প্রদান, ভিডিও কল, কল কনফারেন্স এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

ফাইভ–জি সহজলভ্যতার কারণে প্রচলিত অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রম আরও দক্ষ ও গতিশীল হবে, ফলে কাস্টমার সার্ভিস হয়ে উঠবে আরও সন্তোষজনক। এককথায় বলা যায়, গোটা সমাজটাকেই পরিবর্তন করে দেবে। এত সুবিধা নিয়ে প্রথম যে দেশে ফাইভ–জি টেকনোলজি চালু করা হয়েছিল, তা হলো দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৯ সালে।

ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, হাই রেজল্যুশন ভিডিও দেখা, চালকবিহীন গাড়ি, প্লেন চালানোর ট্রেনিং থেকে শুরু করে নানা গবেষণা কর্ম, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধারকাজে ড্রোন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। গুগল ম্যাপ ব্যবহারেও অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। লোকেশন ট্র্যাকিং করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে না, মিলি সেকেন্ডের মধ্যে ফলাফল দেবে। এমনকি উচ্চ ক্ষমতার এই মুঠোফোন ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোবট, সেন্সর বা অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যেও ব্যবহৃত হবে। এর প্রভাব দেখা যাবে সব ক্ষেত্রে—আমাদের জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি খেলাধুলায়ও। ফাইভ–জি সহজলভ্যতার কারণে প্রচলিত অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রম আরও দক্ষ ও গতিশীল হবে, ফলে কাস্টমার সার্ভিস হয়ে উঠবে আরও সন্তোষজনক। এককথায় বলা যায়, গোটা সমাজটাকেই পরিবর্তন করে দেবে। এত সুবিধা নিয়ে প্রথম যে দেশে ফাইভ–জি টেকনোলজি চালু করা হয়েছিল, তা হলো দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৯ সালে।

ফাইভ–জি হাই ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা থাকার কারণে অদূর ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি শুধু মুঠোফোন ইন্টারনেট নয়, বরং হোম ইন্টারনেটেও নিজের জায়গা দখল করে নেবে। গ্রামীণ, পাহাড়ি ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছেনি কারণ, ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো লোকসানের আশঙ্কায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্রডব্যান্ড কেব্ল বা ফাইবার অপটিক কেব্ল স্থাপন করেনি সেখানে। ফাইভ–জি প্রযুক্তি চলে আসার পর ওই সব এলাকার লোকেরাও গিগাবাইট/সেকেন্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুবিধা পাবে এবং ইন্টারনেট অপারেটরদেরও আর মাটির নিচ দিয়ে কিংবা ওপর দিয়ে কেবল টানানোর প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এতে থাকবে মাত্র ১ মিলি সেকেন্ডের ল্যাটেন্সি এবং এটি ৯০ শতাংশ কম এনার্জি ব্যয় করে কাজ করবে। ডেটা ট্রান্সমিশনে সাধারণত ৩ দশমিক ৫ থেকে ২৬ গিগাহার্টজের মতো উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনেক ক্ষমতা থাকে। কিন্তু স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে তাদের আওতা কম থাকে, ফলে সামনে কোনো বাধা পেয়ে আটকে যায়।

ফাইভ–জির প্রযুক্তিতে এ সমস্যা একেবারেই থাকবে না। কারণ, এটি এমন একটি নতুন রেডিও প্রযুক্তি, যা রেডিও তরঙ্গের ব্যবহার আরও বেশি নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মুঠোফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে, অনলাইন এডুকেশনে এক যুগান্তকারী বিপ্লব নিয়ে আসবে। স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক রদবদল ঘটাবে। মেডিকেল ডিভাইসের সঙ্গে ফাইভ–জি সিম ব্যবহার করে ডাক্তার দূরের কোনো রোগীকে শহরে বসেই জরুরি চিকিৎসা দিতে পারবেন। এমনকি রোবোটিক সিস্টেমের সাহায্যে রিমোট সার্জারি করতে পারবেন।

সর্বত্র ফাইভ-জি চালু হলে দূরে থেকেও ঘরের লাইট, ফ্যান, এসি ও কৃষিক্ষেত্রে পানির পাম্প চালু বা বন্ধ, পুকুরে মৎস্য চাষ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে (ইন্টারনেট অফ থিংস এর মতো)। ফাইভ–জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে টিভি চ্যানেলগুলো দেখার জন্য ডিসের প্রয়োজন হবে না।

বডি ফিটনেস ডিভাইস নিজের শরীরের সঙ্গে ব্যবহার করে বডি থেকে সিগন্যাল পাঠাতে মিলি সেকেন্ড সময় লাগবে। গাড়ির লোকেশন, স্পিড, ডেস্টিনেশনসহ ট্রাফিকের সব ইনফরমেশন হাতের মুঠোয় চলে আসবে ফলে ড্রাইভিং, গাড়ি দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে। গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে আরও সুখময় করে তুলবে। বিশেষ করে, অনলাইন গেমগুলোকে সবার কাছে অবাধ করে তুলবে ফলে মুঠোফোন গেমিং ইন্ডাস্ট্রির প্রচুর বিস্তার ঘটবে।

প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকার ২০০টি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে এই ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হবে। ঢাকার গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানাসহ কিছু বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাকে এ পরিষেবার আওতায় আনা হবে। সর্বত্র ফাইভ-জি চালু হলে দূরে থেকেও ঘরের লাইট, ফ্যান, এসি ও কৃষিক্ষেত্রে পানির পাম্প চালু বা বন্ধ, পুকুরে মৎস্য চাষ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে (ইন্টারনেট অফ থিংস এর মতো)। ফাইভ–জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে টিভি চ্যানেলগুলো দেখার জন্য ডিসের প্রয়োজন হবে না। কম্পিউটারে থাকা ফাইভ–জি চিপ থেকে ডেটা ট্রান্সমিট করে ফোনে, ট্যাবলেটে, টিভিতে ডেটা সিংক করা সম্ভব হবে।

আবার একটি গেমিং কনসোল দিয়ে একসঙ্গে একাধিক টিভি চালানো যাবে অনায়াসেই। ঘরের ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি প্রযুক্তির আওতায় থাকবে। ফলে জনপ্রিয় হবে স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি, সেলফ ড্রাইভিং কার, হেলথ মনিটরিং ডিভাইস আর অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো ডিভাইসগুলো। চোখের পলক পড়ার পূর্বেই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিকাশ ঘটবে ফাইভ-জির কল্যাণে অনায়াসেই। তবে এসব সুবিধা পেতে হলে বিদ্যমান টাওয়ারগুলো ফাইভ-জিতে রূপান্তর করতে হবে এবং গ্রাহকদের লাগবে সেই উপযোগী হ্যান্ডসেট। আর দ্রুতগতির বিষয়টি নির্ভর করবে কোনো স্পেকট্রাম ব্যান্ডে ফাইভ-জি ব্যবহার করা হবে এবং মুঠোফোন কোম্পানিগুলো ট্রান্সমিটারের পেছনে কতটা বিনিয়োগ করবে। কর্তৃপক্ষকেও উদ্যোগ নিতে হবে ফাইভ-জি টেকনোলজির উপযোগী সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার প্রটোকল নির্ধারণ করা।

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি এর অধ্যাপক।

 

মুখোশের আড়ালে থাকা মুরাদদের কী হবে

নারী নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. হাসান মুরাদ
নারী নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. হাসান মুরাদ

দিলশাদ আরা (ছদ্মনাম) একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় উচ্চ পদে কাজ করেন। কিছুদিন আগে তিনি একজন নারী সহকর্মীসহ এক উচ্চপদস্থ পুরুষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠানটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো। সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে আমন্ত্রণপত্র সরকারি কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে সহকর্মীসহ বিদায় নেওয়ার কথা বলতেই সরকারি কর্মকর্তা হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন? আপনারা নারীরা হলেন সৌন্দর্যের প্রতীক। আপনারা পাশে থাকলে আমরা কাজে উৎসাহ পাই।’

দায়িত্বশীল পদে আসীন সরকারি কর্মকর্তার হঠাৎ এই রকম উক্তি শুনে ভীষণ বিব্রত বোধ করলেন দিলশাদ আরা। তাঁর বিব্রত হওয়া মুখটি হয়তো প্রত্যক্ষ করেছিলেন কর্মকর্তা। এরপর বললেন, ‘আমাকে আবার মুরাদ হাসান ভাববেন না যেন। এত মাপজোখ করে কি কথা বলা যায় ম্যাডাম? জীবনে তো তাহলে আনন্দ-ফুর্তি বলে কিছুই থাকবে না।’

দিলশাদ আরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি কী করবেন। তিনি কি প্রতিবাদ জানাবেন? কীভাবে প্রতিবাদ জানাবেন? এই প্রতিবাদের পরিণতিই-বা কী হবে? এই প্রতিবাদের জেরে হয়তো বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তাঁর সংস্থাটির, তাঁর চরিত্র নিয়েও হয়তো টানাহেঁচড়া করবেন কেউ কেউ। আর এ ধরনের আচরণ যে আসলে অসদাচরণ—এ বিষয়েই জানেন বা মানেন কয়জন? তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে শুকনা হাসি হেসে সহকর্মীসহ বেরিয়ে এলেন তিনি। ফেরার পথে গাড়িতে বসে তিনি ও তাঁর সহকর্মী পুরোপুরি নিশ্চুপ রইলেন সারাটা পথ।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও অশালীন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মুরাদ হাসান মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং তিনি নিরাপদে দেশত্যাগ করতে পেরেছিলেন। এভাবে বারবার তাঁর মতো ক্ষমতাধর মানুষেরা দেশ, মন্ত্রণালয় কিংবা কর্মস্থল ত্যাগ করে কিংবা অপসারিত হয়ে পার পেয়ে যান। গুরু পাপে তাঁদের শাস্তি সামান্যই।

দিলশাদ আরা ভাবছিলেন ঘটনাটি নিজ প্রতিষ্ঠানে ঘটলে হয়তো তিনি অন্তত রিপোর্ট করার কথা ভাবতেন। কিন্তু প্রভাবশালীর দাপটে এ ধরনের ঘটনায় কী করা যেতে পারে, তা অনেক চিন্তাভাবনা করেও কূলকিনারা করতে পারলেন না তিনি।

দিলশাদ আরা নামটি ছদ্মনাম হলেও ঘটনাটি কিন্তু বাস্তব। হরহামেশা এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হন দিলশাদ আরার মতো হাজারো নারী। সমাজের উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরে অহরহ ঘটে এসব ঘটনা। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় তখন, যখন মন্ত্রণালয়, সচিবালয়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কিংবা অতিক্ষমতাধর পুরুষ কর্তৃক নারীরা এ ধরনের হয়রানির শিকার হন।

মৌখিক হয়রানির ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেমন প্রমাণ থাকে না, তেমনি এসব ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে নারাজ অনেকেই। ফলে অধিকাংশ পীড়নকারীর চেহারাই অপ্রকাশিত রয়ে যায়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ বেরিয়ে আসে তাঁদের চেহারা। কিন্তু ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা এসব মানুষের চেহারা উন্মোচিত হবে কীভাবে? যে যেভাবে পারছেন, ক্ষমতা আর সুবিধাজনক সামাজিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নারীকে হয়রান করছেন।

ফাঁস হওয়া অডিও টেপের সুবাদে আমরা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ডা. মুরাদ হাসানকে একজন প্রভাবশালী চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে হয়রানি করেছিলেন বলে জানতে পারি। ওই অভিনেত্রী হয়রানির শিকার হওয়ার পরও দুই বছর নিশ্চুপ ছিলেন। অবশেষে ফোনালাপ ফাঁস হলে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। এ ফোনালাপ কেন, কী উদ্দেশ্যে এত বছর পর প্রকাশিত হলো, সে আলোচনার অবকাশ আছে নিশ্চয়ই। তবে যে উদ্দেশ্যেই ফোনালাপটি ফাঁস করা হোক না কেন, বিষয়টি যে সত্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও অশালীন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মুরাদ হাসান মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং তিনি নিরাপদে দেশত্যাগ করতে পেরেছিলেন। এভাবে বারবার তাঁর মতো ক্ষমতাধর মানুষেরা দেশ, মন্ত্রণালয় কিংবা কর্মস্থল ত্যাগ করে কিংবা অপসারিত হয়ে পার পেয়ে যান। গুরু পাপে তাঁদের শাস্তি সামান্যই।

সব আলোচনা ফাঁস হয় না, সব সত্যও বেরিয়ে আসে না। তাই সাজা হয় না এ ধরনের হাজারো ক্ষমতাধরের। কোনো কারণে নোংরামি প্রকাশিত হলে সংবাদমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, আবার কিছুদিন পর সে ঝড় থেমেও যায়। এ অপরাধীরা চাকরি থেকে অপসারিত হলেও তাঁদের মন থেকে কিন্তু বিকৃতি ও অপরাধপ্রবণতা অপসারিত হয় না। তাই নতুন পরিসরে বিপুল উদ্যমে তাঁরা আবার নিজেদের মনোরঞ্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশত্যাগ, চাকরিত্যাগ কিংবা অপসারণে পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানে আছে সেফগার্ডিং পলিসি, জেন্ডার পলিসি কিংবা এ ধরনের নানা নীতিমালা। যদিও ভিকটিম ব্লেমিং সংস্কৃতি আর পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা—কাঠামোর কারণে নারীরা হয়রানির অভিযোগ করতে দ্বিধান্বিত থাকেন, তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু হয়রানি সৃষ্টিকারী এবং হয়রানির শিকার ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান যদি আলাদা হয়, তবে সে ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। আর হয়রানকারী পুরুষটি যদি ক্ষমতাধর হন, তাহলে তো কথাই নেই। কার কাছে কোথায় গিয়ে দিলশাদ আরার মতো নারীরা প্রতিকার পাবেন, সে বিষয়ে গোলকধাঁধায় পড়তে হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট প্রদত্ত যে নীতিমালা আছে, তা পড়লে মনে হয় সেখানে অপরাধী ও অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আকারে–ইঙ্গিতে কিংবা অশালীন ভাষার প্রয়োগে নারীর সম্মানহানি ঘটলে নারী কোন আইন দ্বারা অপরাধীর সাজা দাবি করতে পারেন, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। এরপর আছে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করাসংক্রান্ত জটিলতা। যেখানে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রমাণের অভাবে অপরাধী আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়, সেখানে এ ধরনের মৌখিক হয়রানি প্রমাণ করা যে কী কষ্টসাধ্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বাধ্য হয়ে এ ধরনের অশ্লীল ইঙ্গিত আর ভাষা হজম করতে হয় নারীদের।

প্রশ্ন হলো আর কতকাল আমরা মুরাদ হাসানের মতো অপরাধীদের মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে যেতে দেখব আর নিশ্চুপ দিলশাদ আরারা আর কতকাল বদ্ধ গাড়িতে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন?

 

চাকরি ছেড়ে ভারী যন্ত্রের ব্যবসা

চাকরি ছেড়ে ভারী যন্ত্রের ব্যবসা

দেশে বড় অবকাঠামো নির্মাণ যত বাড়ছে, ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহারও তত বাড়ছে। এসব যন্ত্রের পুরোটাই আবার আমদানিনির্ভর। সে জন্য অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন ভারী যন্ত্রের ব্যবসায়। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘আর্থমুভিং সলিউশন লিমিটেড’।

দেশে এখন আর্থমুভিং সলিউশন হচ্ছে চীনের ভারী যন্ত্রপাতি উৎপাদক এক্সসিএমজির একক পরিবেশক। বিশ্বে ভারী যন্ত্রপাতি বিক্রির শীর্ষ তিনে আছে এক্সসিএমজি। আর দেশে ভারী যন্ত্রপাতি আমদানির শীর্ষে রয়েছে আর্থমুভিং সলিউশন। এই প্রতিষ্ঠান এখন বছরে ৪০০ কোটি টাকার অধিক মূল্যমানের ভারী যন্ত্র ও ট্রাক আমদানি করছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আর্থমুভিং সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুল হক
আর্থমুভিং সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুল হক

দেশে এক্সসিএমজির যন্ত্রের ব্যবহার এতটা বেড়েছে যে বড় অবকাঠামোর পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও পুকুর খনন, সড়ক নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজে এসব ভারী যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।

দেশে অবকাঠামো নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য যেসব ভারী যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ব্যবহৃত। অর্থাৎ অন্য দেশে ব্যবহারের পর এসব যন্ত্রপাতি দেশে আমদানি করা হচ্ছে। অনেকটা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মতো। তবে আর্থমুভিং শুধু নতুন যন্ত্রপাতিই আনছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন ও পুরোনো যন্ত্রের মধ্যে দামের পার্থক্য অনেক বেশি। এ কারণে পুরোনো যন্ত্রের চাহিদা বেশি। দেশে প্রতিবছর নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজারটি ছোট-বড় যন্ত্র আমদানি করা হয়, যার দাম প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বছর পাঁচেক আগেও আমদানি করা হতো এক হাজার কোটি টাকার কম মূল্যের যন্ত্র। এর মধ্যে এক্সসিএমজির যন্ত্র আমদানি করা হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার।

চাকরি ছেড়ে ভারী যন্ত্রের ব্যবসা

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে খননযন্ত্র এক্সকাভেটর, ভারোত্তোলনের বিভিন্ন ধরনের লোডার ও হুইল ডোজারস, ভূমি সমান করার সোয়েল কমপেক্টর, পাইপ সঠিকভাবে স্থাপনের জন্য পাইপ লেয়ারস, ব্যাকহো লোডারস ইত্যাদি।

আসুন, আমরা এবার আর্থমুভিং সলিউশন লিমিটেডের ব্যবসা শুরুর গল্প শুনি। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ী পরিবারের মুজিবুল হক ১৯৯৩ সালে ভর্তি হন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট)। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্রপ্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে ২০০১ সালে চাকরি নেন গ্রিনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রাক্টরস কোম্পানিতে (গেটকো)। একই সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন।

২০০৫ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি)। সেই সুবাদে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। বদৌলতে নতুন কিছু করার ভাবনা মাথায় ঢোকে এবং স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাই সরকারি চাকরির ফাঁকে ফাঁকে এক নিকটাত্মীয়ের ব্যবসায় পরামর্শ দিতে শুরু করেন। এর ফলে তাঁর হাত ধরে ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও ভালো অবস্থায় পৌঁছায়। এরপর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জেনারেটর ও ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ পান। এরই মধ্যে ঢাকার মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের জন্য ভারী যন্ত্র সরবরাহের কাজও পান, যা তাঁকে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দেয়।

সরকারি চাকরির সুবাদে যেসব কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম, তাতে আমি নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়ে যাই। এরই ফসল এখনকার আর্থমুভিং সলিউশন।
মুজিবুল হক, এমডি, আর্থমুভিং সলিউশন

ইতিমধ্যে সহকারী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে যান মুজিবুল হক। তত দিনে চীনের ভারী যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সসিএমজির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ২০১৭ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি আর্থমুভিং সলিউশন লিমিটেড নামে নতুন কোম্পানি গড়ে তোলেন। প্রথমে অফিস নেন মিরপুর ডিওএইচএসে। ওই বছরে ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের নতুন ভারী যন্ত্র আমদানি করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠান বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪২৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে। আর্থমুভিং এখন যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি বড় বড় ঠিকাদারের আমদানি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে এবং বিক্রয়োত্তর সেবা ও যন্ত্রের গ্যারান্টি সুবিধা দেয়।

মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির সুবাদে যেসব কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম, তাতে আমি নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়ে যাই। এরই ফসল এখনকার আর্থমুভিং সলিউশন।’ তিনি বলেন, এখন ভারী যন্ত্র শুধু শহরে নয়, গ্রামেও পৌঁছে গেছে। সহজলভ্য হওয়ায় কৃষিযন্ত্রের মতো এসব যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।

মুজিবুল হক বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজে এক্সসিএমজির যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরি ছেড়ে ব্যবসায়ী হওয়া এই প্রকৌশলী জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান আর্থমুভিং সলিউশন শুধু এক্সসিএমজিরই নয়, একই সঙ্গে চীনের সিনোট্রাকেরও পরিবেশক। দেশের বিভিন্ন নির্মাণকাজে এখন সিনোট্রাকের ভারী যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সিনোট্রাক যন্ত্র আমদানি করছেন।

মুজিবুল হক জানান, আর্থমুভিং সলিউশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রিসিশন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এখন স্টিলের সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ করছে। এ ছাড়া ছোট আকারে আবাসন প্রতিষ্ঠান ও একটি বায়িং হাউসের ব্যবসা রয়েছে তাঁর।

মুজিবুল হকের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডে অবস্থিত আর্থমুভিং সলিউশনের কার্যালয়ে। ভবনজুড়েই নিজেদের অফিস। সেখানে চীনা নাগরিকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

মুজিবুল হক বলেন, ভারী যন্ত্রের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ব্যবসাও দিনে দিনে বড় হচ্ছে। সব বিভাগের জন্য অফিস নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এটি অন্য রকম স্বস্তি দেয়।